ভাঙড় কলেজের ছাত্রদের দুষ্টুমি করতে নিষেধ মমতার

দুষ্টুমি না করে ভাল করে পড়াশোনা করার উপদেশ তিনি দিলেন একটি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। শুক্রবার দুপুরে বিধানসভার লবি-তে। উপদেষ্টার নাম: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজের নাম: ভাঙড় মহাবিদ্যালয়। এখনও যে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তৃণমূল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত খোদ আরাবুল ইসলাম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৩
Share:

দুষ্টুমি না করে ভাল করে পড়াশোনা করার উপদেশ তিনি দিলেন একটি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। শুক্রবার দুপুরে বিধানসভার লবি-তে।

Advertisement

উপদেষ্টার নাম: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজের নাম: ভাঙড় মহাবিদ্যালয়। এখনও যে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তৃণমূল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত খোদ আরাবুল ইসলাম। যিনি কলেজের স্টাফ রুমে ঢুকে এক শিক্ষিকাকে জগ ছুঁড়ে মারা, পুলিশ অফিসারকে মারধর, সিপিএম নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লার উপর হামলার অভিযোগ-সহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার কিছু দিনের মধ্যেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “দুষ্টুমি করাটা দামাল ছেলেদের একটা ধর্ম।”

মমতা এই মন্তব্য করেছিলেন এ বছরের ৩০ জানুয়ারি, ব্রিগেডের জনসভায়। সেখান থেকেই লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। দামাল ছেলে কারা আর তাদের মধ্যে কারাই বা দুষ্টুমি করছে মমতা তার উল্লেখ করেননি। কিন্তু মমতার এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীদের অভিমত ছিল, মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী এ কথা বললে তো অনুব্রত মণ্ডল, আরাবুল ইসলামদের মতো অভিযুক্তেরা উৎসাহ পাবে।

Advertisement

তবে এ দিন দুপুরে ভাঙড় কলেজের পড়ুয়াদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দুষ্টুমি করছ না তো? ভাল করে পড়াশোনা করো।” ওই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সাত ছাত্র ও সাত ছাত্রীকে এ দিন সকালে বিধানসভার অধিবেশন দেখাতে নিয়ে যান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্নাতক স্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠক্রমে বিধানসভা একটি অধ্যায়। বাস্তবে বিধানসভা কী রকম, অধিবেশন কী ভাবে চলে, স্পিকার কী ভূমিকা নেন, এ সব দেখাতেই পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভাঙড় কলেজের ওই পড়ুয়ারা দোতলায় গ্যালারিতে বসে এ দিন বিধানসভার প্রথমার্ধের অধিবেশন দেখেন। ঘটনাচক্রে এ দিনই প্রথমার্ধে বিধানসভায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমার্ধের অধিবেশন শেষে মুখ্যমন্ত্রী লবি হয়ে নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে ভাঙড় কলেজের পড়ুয়ারা তাঁকে প্রণাম করেন। মমতা জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা কোথা থেকে এসেছ?” ভাঙড় কলেজ শুনে মুখ্যমন্ত্রী থমকে দাঁড়ান। দেহরক্ষী ও অন্যদের বলেন, “আমি ওদের সঙ্গে কথা বলব।” তার পরেই পড়ুয়াদের দুষ্টুমি না করে ভাল করে পড়াশোনার উপদেশ মুখ্যমন্ত্রীর।

দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরেও আরাবুল যেমন এখনও ওই কলেজের সভাপতি, তেমনই তাঁর ছেলে হাকিমুল ইসলাম ভাঙড় কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। হাকিমুল আবার স্থানীয় এক গ্রাম পঞ্চায়েতেরও প্রধান। ভাঙড়ে আরাবুল ও তৃণমূলের আর এক স্থানীয় নেতা কাইজার আহমেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বহু দিনের। তার প্রভাব কিছুটা পড়েছে কলেজের পড়ুয়াদের একাংশের মধ্যেও। মাঝেমধ্যে ইউনিয়ন রুমে তালা লাগিয়ে চলে যায় এক গোষ্ঠীর পড়ুয়ারা, অন্য গোষ্ঠীকে বিপাকে ফেলতে। কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে না হলেও দুই গোষ্ঠীর পড়ুয়ারা গেটের বাইরেই হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন, এমন ঘটনা ঘটেছে।

তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী তথা নেত্রী জানেন, ভাঙড়ে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও আরাবুলের কার্যকলাপের প্রভাব থেকে পড়ুয়াদের একাংশও মুক্ত নন। দলের এক নেতার মতে, পড়ুয়াদের সেই কার্যকলাপকেই মমতা এ দিন ‘দুষ্টুমি’ বলে অভিহিত করেছেন এবং হাল্কা ভাবে হলেও সতর্ক করে দিয়েছেন, যাতে পড়ুয়ারা দুষ্টুমি না করে পড়াশোনায় মন দেন।

তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব যে ভাঙড় নিয়ে উদ্বিগ্ন, সেটা এ দিন বোঝা গিয়েছে পুর ও নগরোন্নয়মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের কথা থেকেও। মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণাম করার পর ভাঙড় কলেজের পড়ুয়ারা বিধানসভার লবি-তে প্রণাম করেন ববিকেও। পরিচয় জানার পর ববির প্রশ্ন, “তোরা এত বদমায়েশি করিস কেন?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement