ছারখার হয়ে যাওয়া দোকান হাতড়ে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। —নিজস্ব চিত্র
দুষ্কৃতী তাণ্ডবে কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে গেল উস্তি বাজার। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাজার দু’য়েক সশস্ত্র দুষ্কৃতী বোমা মারতে মারতে বাজারে ঢোকে। একের পর এক দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বোমা-গুলিতে অন্তত জনা দ’শেক আহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এলাকায় উত্তেজনা থাকায় র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স টহল দিচ্ছে। কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের না হলেও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে। উস্তির কুলেশ্বর গ্রাম থেকে জয়নগরের বাড়িতে ফেরার জন্য দৌলা স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন এক দম্পতি। তাঁদের উপরে চড়াও হয় কিছু স্থানীয় যুবক। রাতেই ওই দম্পতির চেনা পরিচিত কিছু লোক এসে হামলাকারীদের মারধর করে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের না হলেও এলাকায় চাপা উত্তেজনা ছিল।
এ দিন সকাল ৯টার পরে হাজার দু’য়েক লোক এসে তাণ্ডব শুরু করে উস্তি বাজারে। একাধিক দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বোমা ছোড়া হয় মুহুর্মুহু। শূন্যে গুলিও চালায় হামলাকারীরা। অনেককে মারধর করা হয়। রাস্তার ধারের কিছু বাড়িতে ভাঙচুর চলে। সংলগ্ন গ্রামগুলিতেও হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘণ্টা তিন-চার ধরে তাণ্ডব চালানোর পরে যায় হামলাকারীরা। দমকলের বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন এসে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। উস্তি বাজারের এক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বলেন, “আচমকা কোনও কারণ ছাড়াই দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব শুরু করে।” নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না করা পর্যন্ত আজ, শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্ট কাল দোকানপাট বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ-কমব্যাট ফোর্স-র্যাফ এলাকায় নামানো হলেও প্রথমটায় তাদের কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হয়েছিল। দুষ্কৃতীদের তাড়া খেয়ে পুলিশকেও পালাতে দেখা গিয়েছে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক গিয়াসুদ্দিন মোল্লাও এসেছিলেন ঘটনাস্থলে। সকালে বাজার থেকে কিছুটা দূরে একটি দোকানে বসেছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু তিনি হামলাকারীদের সংযত করা তো দূরের কথা, উল্টে মদত দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে হামলাকারীদের সঙ্গে নানা সময়ে তাঁকে কথা বলতেও দেখা গিয়েছে। পুলিশকে তিনি কাজে বাধা দিয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের অভিযোগ। প্রথম দিকে পুলিশকে পরিচালনা করতে মন্ত্রীকেই দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
গিয়াসুদ্দিন অবশ্য বলেন, “গোলমাল হচ্ছে শুনে আমি দু’পক্ষকে ঠেকাতে গিয়েছিলাম। পুলিশকে কোনও ভাবে বাধা দিইনি। বরং ক্ষয়ক্ষতি কত হল, তা দ্রুত খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে, তা গোটাটাই বিজেপির সাজানো গল্প।” যার উত্তরে বিজেপির রাজ্য নেতা অভিজিৎ দাস (ববি) বলেন, “শাসকদলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরাই তাণ্ডব চালিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করুক। নিরপেক্ষ তদন্ত করে মূলচক্রীকেও গ্রেফতার করা হোক।” তাঁর আরও বক্তব্য, “শাসক দল সব ঘটনাই শুরুতে সাজানো বলে দায় সারে। পরে তদন্তে দেখা যায়, ওই ঘটনায় তাদের দলেরই মদত আছে।” গোটা পরিস্থিতি নিয়ে সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “পরস্পরের উপরে দোষারোপ না করে রাজনৈতিক স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্যোগ করা উচিত।” অবিলম্বে সর্বদল বৈঠক ডাকা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।