ছোটদের জন্য উপহার।—নিজস্ব চিত্র।
ট্রেনযাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা নিয়ে এক দিন শুরু হয়েছিল যাত্রা। তেইশ বছর হতে চলল, এখনও সেই উদ্দেশ্যে অটল সকলে। কখনও অসুস্থ সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে তাদের রক্ত দেওয়া, তো কখনও সহকর্মীদের পরিবার-পরিজনদের আনন্দ দিতে খেলা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শীতবস্ত্র দান কিংবা শিশুদের বই-খাতা-পেন দিয়ে উত্সাহ দেওয়া সব কাজেই সমান কুশলী ট্রেনের এই নিত্যযাত্রীরা।
বসিরহাট থেকে কলকাতা ট্রেনে যাতায়াত করেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী বাপি ভট্টাচার্য, সরকারি কর্মী প্রভাতকুমার দে-রা। তাঁদেরই অনেকে মিলে একদিন ঠিক করেছিলেন, কিছু একটা করে দেখাবেন। এঁরাই গড়ে তোলেন ‘হাসনাবাদ-শিয়ালদহ নিত্যযাত্রী সংস্থা ৪ নম্বর কম্পার্টমেন্ট’। ১৯৯২ সালে গড়ে ওঠা নিত্যযাত্রীদের এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দীপেন পাল, রাজা বিশ্বাস, প্রসেঞ্জিত দাঁ, জয়দেব বিশ্বাস, সাথী দালাল, সুজয় কাবাসি, বিপ্লব সরকার, সুখেন্দু হালদার, স্বপন চট্টোপাধ্যায়, কামারুজ্জ্বামানদের মতো জনা পঞ্চাশ। বিপদ-আপদে সঙ্গীদের পাশে দাঁড়ানো তাঁদের কর্তব্য বলেই মনে করেন। সঙ্গীদের কারও সন্তান কাজ না পেলে সেই ব্যবস্থা করারও চেষ্টা করেন সকলে মিলে। ফুটবল-ক্রিকেট খেলার আয়োজন করেন সকলে। শীতকালে চড়ুইভাতি তো আছেই। বছর পাঁচেক ধরে উদ্যোক্তরা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন শুরু করেছেন। রক্তদান ও চিকিত্সা শিবিরেরও আয়োজন করেন তাঁরা।
সম্প্রতি হাড়োয়ার হাদিপুর কালীতলা গ্রামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি শতাধিক পড়ুয়ার হাতে পেন-খাতা-চকোলেট তুলে দেওয়া হয়। কয়েকজন গরিব মানুষকে কম্বল দেওয়া হয়। পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, স্যুভেনিয়র প্রকাশের।
সংগঠনের সভাপতি প্রভাতকুমার দে এবং সম্পাদক বাপি ভট্টাচার্য বলেন, “দিন-রাতের একটা বড় সময় আমাদের ট্রেনের মধ্যেই কেটে যায়। অনেক রকম অভিজ্ঞতা হয়। এ সবের মধ্যে দিয়েই আমরা একে অন্যের অনেক কাছাকাছি এসেছি। সকলকে নিয়ে একটা বৃহত্তর পরিবার বলেই মনে হয়। সকলে মিলে ভাল কিছু একটা করব, এই চিন্তা-ভাবনা থেকেই এ সব কাজে জড়িয়ে পড়া।”