পড়ার বইয়ে ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’ কথাটি শুধুই আপ্ত বাক্য বলে মানতে চায়নি তারা। প্রত্যেকে টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে সাধ্য মতো বাজার থেকে কিনে এনেছে চারাগাছ। তাদের সেই চারাগাছ দিয়ে সম্প্রতি হয়ে গেল তিন দিনের ‘সুন্দরবন বৃক্ষরোপণ উৎসব’। স্বভাবতই চোখেমুখে খুশি ধরছে না মথুরাপুর-২ ব্লকের গিরিবালা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়াদের।
বিদ্যালয় সূত্রের খবর, রায়দিঘি পঞ্চায়েতের ২৪ লাট গ্রামের গিরিবালা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট পড়ুয়া ১৩৫ জন। বেশির ভাগ ছেলেমেয়েরই বাবা-মা দিনমজুর বা কৃষিজীবী। তবুও এরই মধ্যে কেউ দু’মাসের কেউ তিন মাসের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ১০-১৫ টাকা করে জমিয়েছিল। তাই দিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়ে বাজার থেকে কিনে এনেছে চারা গাছ। আমলকী, হরিতকি, বয়রা, সোনাঝুরি, অর্জুন, মেহগনি, ঝাউ, শিশু, ছাতিম, নারকেল ও সুপারি ইত্যাদি ছিল তাদের পছন্দের তালিকায়। কয়েক দিন ধরেই সেগুলি জড়ো করে রাখা হচ্ছিল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। সেই সঙ্গে রায়দিঘি বন দফতর থেকে আনা ১৫০০ চারাগাছও ছিল।
দিন কয়েক আগে স্কুলে এক অনুষ্ঠানে সেই চারা পোঁতা হয়। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অভিভাবকদেরও। বিদ্যালয়ের তরফে সকলের জন্য দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। সেই পর্ব সাঙ্গ হলে কোমরে কাপড় জড়িয়ে গাছ লাগানোর কাজে নেমে পড়েন সকলে। মাঠের ধারে বা রাস্তার পাশে কোদাল দিয়ে গর্ত তৈরি করতে দেখে গেল মায়েদের। আর সেই গর্তে গাছ লাগাল পড়ুয়ারা। এ হেন দৃশ্য দেখে আপ্লুত স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ প্রামাণিক বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে ফি বছরই আমরা গাছ লাগানোর কর্মসূচি নিই। তবে এই কাজে অভিভাবকদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান আমাদের কাছে বাড়তি পাওনা।” একই উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল অভিভাবকদের গলাতেও। রেখা পুরকাইত, শিখা সরকার, মানসী প্রামাণিকরা জানান, স্কুলের পক্ষ থেকে এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে যোগ দিতে পেরে খুবই খুশি তাঁরা।
সনাতন ভাণ্ডারী নামে এক অভিভাবক জানালেন, রায়দিঘির ওই প্রত্যন্ত গ্রামে এখনও জ্বালানি গ্যাস পৌঁছয়নি। তাই রান্নার জন্য স্থানীয় এলাকাবাসীদের নির্ভর বলতে গাছের শুকনো ডালপাতা। আর তা সংগ্রহ করতে গিয়ে এবং চোরা কাঠকারবারির উৎপাতে দিনে দিনে গ্রামে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পরিবেশও এর ফলে দিনে দিনে দূষিত হয়ে পড়ছে। তাই স্কুলের বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানে তাঁরা সব কাজ ফেলে জড়ো হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে ছিলেন মথুরাপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পীযুষকান্তি বৈরাগী, রায়দিঘি পঞ্চায়েত প্রধান মোজাফ্ফর হোসেন প্রমুখ। তাঁরা বলেন, “স্কুলের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এমন অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পেরে আমরা গর্বিত।” আর যাদের উৎসাহ ও পরিশ্রমে ওই অনুষ্ঠান, সেই খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে স্বাতী প্রামাণিক, ইন্দিরা প্রামাণিক, পঙ্কজ সরকাররা বলে, “বইয়ে পড়েছি, একটি গাছ একটি প্রাণ। পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে গেলেও আমাদের গাছ লাগাতে হবে।”