অবরোধে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
গরুপাচার এবং পাচারকারীদের তাণ্ডব বন্ধের দাবিতে বসিরহাটের মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে ইটিন্ডা রাস্তায় বিক্ষোভ দেখালো বিজেপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে এর জেরে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়। বিক্ষোভকারীরা মহকুমাশাসকের দফতর চত্ত্বরে ঢুকতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। এই ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে ধাক্কাধাক্কি বেধে যায়।
বিজেপি নেতাদের দাবি, বিনা প্ররোচনায় পুলিশ তাদের উপরে লাঠি চালিয়েছে। বসিরহাটের আইসি প্রসেনজিৎ দাসের অবশ্য দাবি, শতাধিক লোক জোর করে মহকুমাশাসকের দফতরের দিকে যেতে চাইলে নিরাপত্তার জন্য তাদের বাধা দেওয়া হলেও লাঠি চালানোর মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। এ দিকে পুলিশ দলীয় কর্মীদের উপর লাঠি চালিয়েছে বলে দাবি করে বিজেপির পক্ষে ইটিন্ডা রাস্তা অবরোধ করা হয়। পরে বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে স্মারকলিপি পেয়ে বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন গরু পাচারের বিষয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ কয়েকশো বিজেপি সমর্থক বসিরহাট টাউনহল চত্ত্বরে জমা হন। সেখান থেকে পোস্টার, ব্যানার হাতে তারা মিছিল করে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে ইছামতী সেতুর কাছে বোটঘাটে যান। আগে থেকেই সেখানে মাইক বাঁধা ছিল। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের তরফে হাজির ছিলেন হাজারিলাল সরকার, দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শুভ্রজিৎ ভট্টাচার্য, সহ সম্পাদক শ্রীনিবাস দাস, মহকুমা নেতা শুভাশিস চৌধুরী প্রমুখ। কর্মসূচি চলাকালীনই এক দল বিজেপি সমর্থক মহকুমাশাসকের দফতর চত্ত্বরের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের বচসা বাধে। বিক্ষোভকারীদের আটকাতে পুলিশ গেট বন্ধ করতে গেলে ধস্তাধস্তি বেধে যায়।
শুভ্রজিৎবাবু বলেন, ‘‘অপরিসর রাস্তা, অনুন্নত নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জলের অভাবের পাশাপাশি বসিরহাটের মানুষের কাছে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশে গরু পাচার। সীমান্তে গরিব কৃষকদের ফসল নষ্ট করে গরু নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করলে পাচারকারীরা খুন-জখম এমনকী মহিলাদের সম্ভ্রমহানির মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে বড় বড় লরি ভর্তি করে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও পুলিশের ভূমিকা দর্শকের।” তাঁর অভিযোগ, এ সবের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। হাজারিলালবাবুর অভিযোগ, গরুপাচারের জেরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষ। পাচারকারীরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, স্বরূপনগরে গরু পাচারে বাধা দেওয়ায় পাচারকারীদের হাতে বিএসএফ জওয়ান খুন হয়েছেন। হাকিমপুরে ভাঙচুর হয়েছে সীমান্তরক্ষীদের চৌকি। কৈজুড়ি গ্রামে গরু পাচারে বাধা দেওয়ায় দুই মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়, তিন কিশোরীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। এক মহিলাকে খুন পর্যন্ত হতে হয়েছে পাচারকারীদের হাতে। ঘোজাডাঙায় পাচারকারীদের হুমকির কথা পুলিশ-প্রশাসন, এমনকী শাসকদলের নেতাদের জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না”
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, শাসকদলের কেউ কেউ সিন্ডিকেট করে গরুর ব্যবসা শুরু করায় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে উপয়ুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। সেঙ সঙ্গে সমস্যার সুরাহা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।