সচেতন: কৌটো-বন্দি সাপ। ছবি: সুজিত দুয়ারি
বছর সাতাশের যুবকটির শখ, ইউটিউবে বিষধর সাপ ধরার কৌশল দেখা। তা নিয়ে বইপত্র পড়ার অভ্যাস আছে। পরিবেশের ভারসাম্য রাখার জন্য সাপ বাঁচানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই সচেতন ঝন্টুকুমার মণ্ডল। কিন্তু সাপ ধরার কৌশল নিয়ে পড়াশোনা তাঁর জীবনে এ ভাবে কাজে লেগে যাবে, ভাবেননি।
অশোকনগর থানার বনবনিয়া শ্মশানমোড়ে থাকেন ঝন্টু। বুধবার বিষধর একটি সাপ বাঁচানোর সুযোগ পান তিনি। তী ভাবে?
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সুমন বসু নামে বছর সতেরো এক কিশোর দেখে, জুতো রাখার জায়গায় গোখরো সাপ ফণা তুলে রয়েছে। সুমনের বন্ধু দীপও সে দৃশ্য দেখে। শোরগোল পড়ে যায়। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া অজয় বসু, বিভাস বিশ্বাস, কলেজ পড়ুয়া সুজন মণ্ডল-সহ আরও অেকে জড়ো হয়।
ভিড়ের মধ্যে থেকে অনেকেই বলতে থাকে, সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হোক। কিন্তু সুমন-দীপ-বিভাসরা তাতে রাজি ছিল না।
ঘটনার কথা কানে ওঠে ঝন্টুর। তিনি পল্লি চিকিৎসক হিসাবে পরিচিত এলাকায়। ঝন্টু বলেন, কোনও চিন্তা নেই। সাপ ধরার ব্যবস্থা তিনিই করছেন। সুমনের জ্যাঠা বাদলকে ঝন্টু বলেন, একটি লাঠি দিয়ে সাপটির মাথা হালকা করে চেপে ধরতে। বাদল সাহসে ভর করে তেমনটাই করেন। ঝন্টু সাপটির লেজ ধরে একটি প্লাস্টিকের কৌটোয় মধ্যে সাপটিকে ভরে ফেলেন।
খবর দেওয়া হয় বন দফতরকে। বারাসত থেকে দফতরের কর্মীরা এসে সাপটি নিয়ে যান। ফুট দু’য়েক লম্বা বিষাক্ত সাপটিকে না মেরে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়ায় সকলেই ওই যুবকদের প্রশংসা করেছেন।
সাপ নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করলেও আগে কখনও নিজের হাতে সাপ ধরেননি ঝন্টু। বিষাক্ত সাপ ধরতে বুক কাঁপল না ? এক গাল হেসে যুবকের জবাব, ‘‘ইউটিউবে সাপ ধরার কৌশল দেখে ভয় কেটে গিয়েছিল।’’
ছেলের দলের অনেকে জানায়, সাপ পরিবেশের অংশ। কিন্তু মানুষের আচরণের জন্যই দিন দিন সাপের সংখ্যা কমছে। অথচ, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গেলে সাপের সংরক্ষণও দরকার।
বন দফতরের কর্মী অনিমেষ মণ্ডল বলেন, ‘‘এ ধরনের সাপ ধরা ঝুঁকির কাজ। সাপ চোখে পড়লে বন দফতরকে খবর দেওয়াই ভাল।’’ তবে ঝন্টুর সাহসের তারিফ করছেন তাঁরাও।