মাথা-গোঁজা: আমপানের পরে অজয়দের ঘরের অবস্থা
বাড়িতে সকাল থেকে হাঁড়ি চড়েনি। নদীর পাড়ে হাপিত্যেশে দাঁড়িয়ে ছিলেন গৃহকর্তা। যদি ত্রাণের নৌকো দেখতে পান। দেখতে পেয়েওছিলেন। কিন্তু সাঁতরে নদী পেরিয়ে সেই ত্রাণের দু’মুঠো খাবার আনতে গিয়ে তলিয়ে গেলেন অজয় বারিক।
শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে গোসাবার দুর্গাদোয়ানি নদীতে। কাটাখাল এলাকা থেকে সাঁতার দিয়ে বিরাজনগরে যাওয়ার পথে তলিয়ে যান তিনি। পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অজয়ের বাড়িঘর। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। গোসাবা বাজারে মালপত্র আনা নেওয়ার সামান্য কাজ করেন। লকডাউনের জেরে আয় তলানির দিকে। এখনও পর্যন্ত বেসরকারি ত্রাণের উপরেই অনেকখানি ভরসা করে আছেন বলে জানালেন গ্রামের অনেক মানুষ। অজয়ের পরিবারেরও সেই হাল। প্রতিদিন নদীর পাড়ে ত্রাণের আশায় বসে থাকেন অনেকেই। বেসরকারি ত্রাণের নৌকো, লঞ্চ গেলেই সকলে হাঁকাহাঁকি করেন। যাতে লোকজনের নজর পড়ে। একবেলার মতো অন্তত খাওয়ার সংস্থানটুকু হয়।
স্থানীয় মানুষজন জানিয়েছেন, এ দিনও নদীর পাড়ে দাঁড়িয়েছিলেন অজয়। একটি সংগঠনের তরফে ত্রাণ নিয়ে নৌকো অজয়ের গ্রাম কাটাখালির অন্য প্রান্ত বিজয়নগরে এসে থামে। সেখানে ত্রাণ সংগ্রহের হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। মাঝে হাত পঞ্চাশের নদী। অজয় ঝাঁপ দেন জলে। কিন্তু মাঝপথে স্রোতের টানে ভেসে যান।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী অসীমা। বললেন, ‘‘বাড়িতে রান্নার কিছু ছিল না। সকাল থেকে নদীর পাড়ে বসেছিলাম। যখন অন্য পাড়ে ত্রাণের লঞ্চ আসে, তখন সেই ত্রাণ ধরার জন্য নদীতে ঝাঁপ দেয়। বারণ করলেও শোনেনি। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে চেয়েছিল। ’’
অসীমা জানান, আমপানের পরে সে ভাবে সরকারি সাহায্য পাননি। ঘর ভেঙে গেলেও এখনও সারাতে পারেননি। ক্ষতিপূরণের টাকাও পাননি।
যদিও স্থানীয় গোসাবা পঞ্চায়েতের প্রধান বিকাশ নস্করের দাবি, ‘‘ঝড়ের পরে সরকারি সব রকমের সাহায্য পেয়েছে ওই পরিবার। আসলে বিভিন্ন সময় মদ্যপ অবস্থায় এখানে সেখানে পড়ে থাকতেন ওই যুবক। মদ্যপ অবস্থায় নদীতে নেমেই তলিয়ে গিয়েছেন।’’ গোসাবা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি কৈলাস বিশ্বাস বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা ওই পরিবারের পাশে আছি। সরকারি সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা যাতে ওই পরিবার পায়, তা দেখা হচ্ছে।’’
প্রাথমিক ভাবে পুলিশও জানতে পেরেছে, মদ্যপ ছিলেন অজয়। এলাকার মানুষ নিষেধ সত্ত্বেও জলে ঝাঁপ দেন। তবে ত্রাণ আনতেই চেষ্টা করছিলেন।