Snake Bite

কুসংস্কারের বলি যুবক, চিকিৎসায় সুস্থ অনেকে

বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে কুড়িজন সাপে কাটা রোগী আসেন।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা 

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২০ ০৩:১৫
Share:

চিকিৎসাধীন: ক্যানিং হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী।

সাপের ছোবলে জখম হয়েছিলেন কয়েকজন। একজনের প্রাণ গেল কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে। আরও ৪ জন বাঁচলেন সঠিক চিকিৎসায়।

Advertisement

বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে কুড়িজন সাপে কাটা রোগী আসেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, পাঁচজনকে কেউটে, কালাচের মতো বিষাক্ত সাপে কামড়েছিল। একজন মারা গেলেও সঠিক সময়ে হাসপাতালে আসায় বাকি চারজন বিপদসীমার বাইরে আছেন। বাকি রোগীদের বিষহীন সাপ কামড়ানোয় প্রাথমিক চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে মারা গিয়েছেন সন্দেশখালি থানার সুখদোয়ানি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় বৈদ্য (৩৫)। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন কালাচ সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে সঞ্জয়ের। সাপের কামড়ের পরে ওঝা, গুনিনের কাছে নিয়ে সময় নষ্ট করার কারণেই মৃত্যু হয়েছে সঞ্জয়ের, এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

পরিবার সূত্রের খবর, বুধবার সকালে বাড়ির উঠোনে ঘাস কাটছিলেন সঞ্জয়। তখনই সাপে কামড়ায়। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে পরিবারের সদস্যেরা তাঁকে গ্রামেরই এক ওঝার কাছে নিয়ে যান। সেখানে প্রায় একদিন ধরে চলে ঝাড়ফুঁক, তুকতাক। কিছুক্ষণের জন্য সুস্থ বোধ করায় বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সঞ্জয়কে। সন্ধ্যায় ফের অসুস্থ বোধ করতে থাকেন তিনি। আবারও নিয়ে যাওয়া হয় ওঝার কাছে। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন গাছ-গাছালি খাওয়ানো হয়, চলে ঝাড়ফুঁক। কিন্তু অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে ওই সাপেকাটা রোগীর। বৃহস্পতিবার সকালে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের দিকে রওনা দেন পরিবারের লোকজন। বেলা ১০টার সময়ে যখন তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছন, তখন কার্যত শেষ অবস্থা সঞ্জয়ের। তড়িঘড়ি চিকিৎসা শুরু করলেও কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা যান। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক তথা সাপে কাটা রোগের বিশেষজ্ঞ সমরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘পরিবারের কুসংস্কারের ফলেই অকালে প্রাণ গেল ওই যুবকের। ওঝা-গুনিনের কাছে সময় নষ্ট না করে সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে এলে বাঁচানো সম্ভব হত।’’

আমপানের পরে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সাপের মতো শীতল রক্তের প্রাণীরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিষয়টা আগেই অনুভব করতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। ফলে সুরক্ষার জন্য নিজেদের আস্তানা ছেড়ে এ দিক ও দিক বেরিয়ে পড়ে তারা। এতেই মানুষের সঙ্গে সাপের সংঘাত হয়। সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটে বেশি। সাপ নিয়ে কাজ করা ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার সহ সম্পাদক নারায়ণ রাহা বলেন, ‘‘ঝড়ের ফলে প্রচুর গাছপালা ভেঙেছে। সে কারণেও অনেক সাপ আস্তানার খোঁজে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। এর ফলেই মানুষের সঙ্গে সংঘাত বেশি হতে শুরু করেছে। তবে বার বার মানুষদের সচেতন করা হচ্ছে, সাপের কামড়ের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালে আসার জন্য, সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে প্রচারও চালানো হচ্ছে তবুও সমস্যা মিটছে না। ’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement