newborn

Dattapukur: হাসপাতাল-বাস চার মাস, সন্তান-সহ হোমে পথে থাকা প্রসূতি

দুর্বল চেহারার তরুণীটি কী বলছিলেন, নিজেই হয়তো জানতেন না। ভবঘুরে ভেবে কেউ বা কারা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চলে গিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২২ ০৭:৫৯
Share:

মা ও সন্তানকে সুস্থ ভাবে হোমে পৌঁছতে পেরে খুশি চিকিৎসকেরা। প্রতীকী ছবি

দুর্বল চেহারার তরুণীটি কী বলছিলেন, নিজেই হয়তো জানতেন না। ভবঘুরে ভেবে কেউ বা কারা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চলে গিয়েছিলেন। শুরুতে ঠিক মতো নিজের সমস্যার কথা চিকিৎসকদেরও জানাতে পারেননি তরুণী। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করে বুঝে যান, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। তাঁরা এ-ও আন্দাজ করেছিলেন, মেয়েটির কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, প্রসব হওয়া পর্যন্ত ওই তরুণীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে না।

Advertisement

চার মাস বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাটানোর পরে আজ, শনিবার ভোরে এক কন্যাসন্তানকে নিয়ে ওই তরুণী যাচ্ছেন দত্তপুকুরের এক সরকারি হোমে। মা ও সন্তানকে সুস্থ ভাবে হোমে পৌঁছতে পেরে খুশি চিকিৎসকেরাও। কিন্তু তরুণীর জীবনের মর্মান্তিক কাহিনী শুনে চমকে উঠেছেন সকলে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, বিহারের নওদা জেলার বাসিন্দা সুনীতা কুমারী নামে ওই তরুণী কাজের খোঁজে গ্রাম থেকে পৌঁছে গিয়েছিলেন বারাসতের নীলগঞ্জের একটি ইটভাটায়। বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অতিরিক্ত সুপার সুব্রত মণ্ডলের কথায়, ‘‘মেয়েটি জানিয়েছিল, অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় ওকে ইটভাটা থেকে তাড়িয়ে দেয়। রাস্তায় থাকত, খাওয়া জুটত না। অসংলগ্ন কথা বলতে দেখে স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে ভর্তি করান।’’

Advertisement

হাসপাতালে শুক্রবার সুনীতার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর ঠিকানা, বাড়ির লোকের পরিচয়। কিন্তু তরুণী বিহারের নওদা জেলা ছাড়া আর কিছু জানাতে পারেননি। অগোছালো ভাবে যতটুকু জানিয়েছেন, তাতে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর জানাজানি হতেই ইটভাটা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ধারণা, তরুণীর সঙ্গে এমন কিছু ঘটেছে, যা তাঁকে তীব্র মানসিক অবসাদের শিকার করে তুলেছে।

কর্তৃপক্ষ জানান, গত এপ্রিলে তরুণীকে ওই অবস্থায় পাওয়ার পরে তাঁকে হাসপাতালের একটি কেবিনে রেখে চিকিৎসা শুরু হয়। সঙ্গে চলতে থাকে কাউন্সেলিং। জুন মাসে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সুনীতা। কিন্তু সিজ়ারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তরুণীর পরিবারের সদস্যদের খোঁজ মিলছিল না। তখন অতিরিক্ত সুপার সুব্রতবাবুই অভিভাবক হয়ে সিজ়ারের অনুমতি দেন চিকিৎসকদের।

কর্তৃপক্ষ জানান, অবসাদ সম্পূর্ণ না কাটায় প্রসবের পরে বহু দিন শিশুকন্যাটিকে মায়ের কাছে না দিয়ে রাখা হয়েছিল এসএনসিইউ বিভাগে। প্রসবের পরেও শিশুটির পুষ্টি ও তরুণীর চিকিৎসার জন্য আরও দু’মাস তাদের হাসপাতালে রেখে দেওয়া হয়।

আপাতত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইছেন, তরুণী ও তাঁর সন্তানের উপযুক্ত যত্নের জন্য দু’জনকে কিছু দিন সরকারি হোমে রাখতে। হাসপাতালের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘আশা করা যায়, হোমের পরিবেশে ঠিক থাকবে মা-মেয়ে। অবসাদ পুরোপুরি কাটাতে মেয়েটির আরও কিছু চিকিৎসার প্রয়োজন। হোমে থাকলে সেই চিকিৎসা পাবে সে। সবটাই আমরা করব। পরে ওর বাড়ির লোককে খুঁজে বার করার চেষ্টা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement