বনগাঁ-চাকদা সড়কের দু’ধারে দাঁড়িয়ে ট্রাক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হল দম্পতির। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে গোপালনগর থানার পোলতা এলাকায়, বনগাঁ-চাকদা রাজ্য সড়কে। পুলিশ জানিয়েছে মৃতদের নাম বিশ্বজিৎ (২৩) ও রিয়া সর্দার (২২)। তাঁদের বাড়ি স্থানীয় নতুনগ্রাম এলাকায়। পুলিশ ট্রাকটি আটক করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চালক মুকেশ রায়কে। তাঁর বাড়ি বিহারে। পুলিশ জানিয়েছে, দম্পতি বনগাঁ শহরের একটি শপিং মলে কাজ করতেন। এ দিন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন বনগাঁ-চাকদা সড়ক ধরে। পোলতার কাছে বিশ্বজিৎ বাইক থামিয়ে ইন্ডিকেটর জ্বালান। বনগাঁ থেকে চাকদার দিকে যাওয়া একটি খালি ট্রাক সে সময়ে বাইকে ধাক্কা মারে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে ছিটকে পড়েন। ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের কথায়, ‘‘আর কত মৃত্যু দেখতে হবে। সড়ক দখল করে ট্রাকের বেআইনি পাকিংয়ের জন্যই নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশ-প্রশাসন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়।
বনগাঁ-চাকদা রাজ্য সড়কে বেপরোয়া ট্রাক-বাইকের ধাক্কায় নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ মারা যাচ্ছেন। জখম হচ্ছেন। তবুও হুঁশ ফিরছে না প্রশাসনের। কিছু দিন আগে বাইকের ধাক্কায় গোপালনগর থানার এক এএসআই দেবাশিস সরকারও মারা গিয়েছিলেন। এই রাস্তায় চোখে পড়বে, বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে পণ্যবাহী ট্রাক। ফলে রাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। বেআইনি ভাবে সড়কের উপরে পড়ে থাকতে দেখা যায় ইমারতি মালপত্র। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সড়কে গেলেই দেখা যাবে, কিছু তরুণ বাইক চালক বেপরোয়া গতিতে বাইক নিয়ে যাতায়াত করছে। নিজেদের মধ্যে রেসও করে তারা। বাইক চালানোর সময়ে দু’হাত উপরে ছুড়ে দিতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।
বেশিরভাগেরই মাথায় হেলমেট থাকে না। আতঙ্কিত এলাকাবাসী কয়েক মাস আগে আগে নিজেরাই বেপরোয়া বাইক চলাচল বন্ধ করতে পদক্ষেপ করেছিলেন। লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁরা রাস্তায় পাহারায় থাকতেন। তাতে বেপরোয়া বাইক চলা সাময়িক নিয়ন্ত্রণেও এসেছিল। এখন ফের সড়কে বাইকের বেপরোয়া গতি ফিরে এসেছে। বাসিন্দারা জানালেন, সড়ক দিয়ে হেঁটে সাইকেলে বা টোটো করে যাওয়ার সময়ে তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন। কারণ, পাশ দিয়ে বেপরোয়া গতিতে বাইক ছুটে চলে। সড়কটি এলাকার মানুষের কাছে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। লকডাউন শুরুর সময়ে পুলিশের ধরপাকড় যখন বেশি ছিল, তখন বাইকের দাপাদাপি কমেছিল।
২০১০ সালে সংকীর্ণ সড়ক সংস্কার করে চওড়া সড়ক তৈরি হয় এডিবি’র ঋণের টাকায়। তারপর থেকে গাড়ির গতি বেড়েছে। ফাঁকা ও চওড়া রাস্তা পেয়ে অনেক সময়েই ট্রাক ও বাইক চালকেরা গতি এতটাই বাড়িয়ে দিচ্ছেন যে, নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না। চওড়া রাস্তার সুফল মিলছে না রাস্তার ধারে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায়। গত ৯ মাসে শুধুমাত্র গোপালনগর থানা এলাকাতেই পথ দুর্ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছে ৩০ জন। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের সদস্য গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘জেলাশাসকের উপস্থিতিতে ভিডিয়ো বৈঠকে দিন কয়েক আগে বনগাঁ-চাকদা সড়ক থেকে ট্রাক সরানোর দাবি জানিয়েছি। সেখানে পুলিশ, পূর্ত দফতরের কর্তারা ছিলেন।’’ বনগাঁর পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘সড়কের দু’পাশে যাতে ট্রাক না দাঁড়ায়, সে জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ফাঁকা ট্রাক দাঁড়াতে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার জানিয়েছেন, সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।