আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে তরুণদের কথাবার্তা। নিজস্ব চিত্র
ইয়াউর রহমান: আমাদের মধ্যে রিদওয়ান এ বছর প্রথম পঞ্চায়েত ভোট দেবে। তাই উৎসাহটা বেশি থাকবে আশা করা যায়।
রিদওয়ান আহমেদ: ঠিক বলেছো। প্রথম ভোট বলে কথা!
মিনা খাতুন: কিন্তু ভোট আসে ভোট যায়, সাধারণ মানুষের চাহিদা কি ঠিকমতো পূরণ হয়? ভাঙড় বাজার এলাকায় জলের লাইন নিয়ে সমস্যা যেমন এখনও মিটল না।
আনারুল ইসলাম: তা ঠিক। তবে প্রাণগঞ্জ বাজারে থানার কাছে সাধারণ শৌচালয়ের দাবিটা এখন মিটেছে। খুব দ্রুত শুনছি জনসাধারণের জন্য খুলেও দেওয়া হবে।
একরামুল হক: এটা ভাল খবর আমাদের জন্য। অনেক ভাল ভাল কাজ হয়েছে গত কয়েক বছরে। তবু অনেক কিছুই বাকি। এই যেমন, ভাঙড় থানা থেকে বিবিরাইট (ভায়া বড়ালি) দ্বারিকা রোড প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় অনুমোদন হলেও দীর্ঘ দিন হয়ে গেল কাজ এখনও শুরু হয়নি। এই রাস্তার উপরে নির্ভর করে আছেন একাধিক গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
ইয়াউর: এই রাস্তাটা খুবই প্রয়োজন। আবার ভাঙড় তালেব মোল্লার মোড় থেকে বামুনিয়া পর্যন্ত রাস্তাটি চলাচলের অনুপযুক্ত। শুনছি রাস্তাশ্রী প্রকল্পে ওই রাস্তায় পিচের কাজ অনুমোদন হয়েছে। আমরা চাইব, পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া রাস্তাগুলোর কাজ যেন সম্পূর্ণ হয়।
ফারুক মোল্লা: প্রতিশ্রুতিগুলি ভোটের আগেই সম্পূর্ণ হওয়া উচিত। কারণ, ভোটে কোন দল ক্ষমতায় আসবে তা তো আমরা জানি না। আর তা ছাড়া, কোন দল জিতল, কে হারল তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথাও নেই। আমরা সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রীরা চাইব, সুস্থ সমাজ গঠনের মধ্যে দিয়ে মানুষের উপকারে আসে এমন সব গঠনমূলক কাজ হোক।
ইরফান উল ইসলাম: ভোট এলে ভয় লাগে। বোমার আওয়াজ শোনা যায়। সবার কাছে দাবি রাখব, নির্বিঘ্নে সুস্থ ভাবে ভোট হোক। প্রশাসন নজর রাখুক।
একরামুল: ভোট হল গণতান্ত্রিক অধিকার। সেটা পালন করতে গিয়ে সাধারণ ভোটারেরা যেন সমস্যার সম্মুখীন না হন, তা সরকারের দেখা উচিত।
ইয়াউর: ভাঙড় থানার সম্মুখে কাঠের সাঁকোটি পাকাপোক্ত হওয়ার জন্য ব্লক, পঞ্চায়েতগুলি একটা সুষ্ঠু আলোচনা করেছিল। কিন্তু বছর পার হয়ে গেলেও আর কোনও খবর নেই। এই সাঁকো পাকা হলে উপকৃত হবেন প্রাণগঞ্জ বাজার, বিজয়গঞ্জ বাজার, ভাঙড় ২ ব্লকের মানুষ।
আনারুল: এটা অত্যন্ত জরুরি দাবি। ভাঙড়ে আর একটা বিষয় খুবই দরকার। সেটা হল, এই দুই বাজারকেন্দ্রিক একটা উন্নতমানের বাস টার্মিনাল। যেখান থেকে হাওড়া, ধর্মতলা, শিয়ালদহ, রাজাবাজার, ধামাখালি, বসিরহাট, বারাসত ইত্যাদি রুটে বাস চলবে। ব্যবসায়ীদের যেমন সুবিধা হবে, তেমনই সুবিধা পাবেন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-অধ্যাপকেরা।
মিনা: একদম। এটা হলে ভাঙড়ের একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি হবে। আগামী দিনে উন্নত ভাঙড় দেখতে পাব। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে এবং প্রশাসনের কাছে আমাদের এই দাবিগুলি থাকবে।
একরামুল: বিভিন্ন সময়ে দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা সংবাদমাধ্যমে এমন ভাবে দেখানো হয়, যেন ভাঙড় একটা অশিক্ষিত, ভয়ঙ্কর জায়গা। কিন্তু আমরা বলতে চাই, ভাঙড় শান্তি ও ভালবাসার জায়গা। শিক্ষা ও সরকারি চাকরির দিক থেকেও এই এলাকা যথেষ্ট উন্নত।
ইয়াউর: আমি এ বিষয়ে একশো ভাগ সহমত। আমাদের ভাঙড়ের সন্তানদের মধ্যে অধ্যাপক, আমলা, সরকারি কর্মী অনেকে আছেন। শুধু ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে নিট-এ উত্তীর্ণ হয়ে ডাক্তারি পড়ছে প্রায় ১৬ জন। সাহিত্যিক, লেখক, কবিও অনেকে আছেন। ভোটের প্রচার এবং কর্মকাণ্ড যেন এমন না হয়, সামান্য ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের এই সুন্দর এলাকা কালিমালিপ্ত হয়।
আনারুল: সম্প্রতি ভাঙড় হাইস্কুলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে ছাত্রেরা একটা অঘটন ঘটিয়েছিল। ভাঙড়ের বদনাম ছড়িয়ে পড়ে। তবে সত্যিটা হল, ওই ছেলেরা ভাঙড়ের কোনও স্কুলের নয়। বাইরে থেকে এসেছিল।
একরামুল: ভোট আসে যায়। কে জিতল, কে হারল— সেটার থেকেও বড় কথা হল, ভোটের পরে যেন হিংসার আগুন যেন না ছড়ায়। এতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রান্তিক শ্রেণির মানুষেরা।
রদওয়ান: যিনিই জিতুন, যে দলই জিতুক— আমাদের আশা থাকবে রাস্তাঘাট, পানীয় জল এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। সেগুলো যেন গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মিনা: ভাঙড়ের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভাল নয়। সামান্য সন্তান প্রসবের জন্য বেশিরভাগ সময়ে ব্লক হাসপাতালগুলি কলকাতার মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। নলমুড়ি ও জিরেনগাছা হাসপাতাল দু’টিতে আরও উন্নত পরিষেবা চালু করা দরকার।
ইয়াউর: ভোটের সময়ে এই সব বিষয়গুলি খেয়াল করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।