ফাইল চিত্র।
বিরোধীদের চাপ তো ছিলই। সেই সঙ্গেই ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গজিয়ে ওঠা নির্দলের কাঁটাও। অভিযোগ, এই দুইয়ের সাঁড়াশি আক্রমণের মোকাবিলা করতেই রবিবার বারাসতের পুরভোটে ছেড়ে রাখা হয়েছিল বহিরাগত বাহিনীকে। যা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তুমুল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। পাড়ার ভোটে এ ভাবে বহিরাগতদের দাপাদাপি দেখে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন তাঁরা। বিব্রত জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেই।
তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা স্তরের এক নেতার কথায়, ‘‘অনেকেই ফোন করে নিন্দা করছেন। এমন ভোট বারাসতে আগে কখনও হয়নি। যাঁরা ভোট দিতে পারলেন না, তাঁরা আগামী দিনে আমাদের সঙ্গে থাকবেন তো? স্থানীয় নেতৃত্বের এ নিয়ে ভাবা উচিত।’’
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, বারাসতে সাতটি আসন রয়েছে সিপিএমের। এর পাশাপাশি, এ বার বারাসতে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে প্রবল জটিলতা তৈরি হয়। প্রথম তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, দ্বিতীয় তালিকায় তাঁরা অনেকেই বাদ পড়েন। আবার দু’টি তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে কোথাও স্থানীয় নেতৃত্ব নিজেদের পছন্দের কাউকে প্রার্থী করেছেন।
কোথাও আবার টিকিটের টোপ দিয়ে দলে ঢুকিয়ে টিকিট দেওয়া হয়নি, এমনও অভিযোগ উঠেছে। এ হেন নানা জটিলতার জেরে এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে, এমন পাঁচ জন নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে মরিয়া ছিলেন স্থানীয় নেতাদের একাংশ। তাই রবিবার
বারাসতকে বহিরাগতদের মুক্তাঞ্চল করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যা নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েন খোদ তৃণমূল প্রার্থীরাও।
একটি ঘটনায় যেমন আগের জেতা আসনে প্রার্থী হওয়া এক প্রাক্তন মহিলা কাউন্সিলর রবিবার আচমকা নিজের এলাকায় বাইক বাহিনীকে ঢুকতে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যান। আড়ালে গিয়ে ফোনে নেতৃত্বকে তিনি জানান, বহিরাগতদের ভয়ে প্রকৃত ভোটারেরা ফিরে গেলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এর পরে বাইক বাহিনী ফিরে গেলেও ঘটনার ভিডিয়ো করতে থাকা এক সিপিএম সমর্থকের ফোন ভেঙে দেয় তারা। পরে পাড়ার প্রবীণদের কাছে দু’-এক কথা শুনতে হয় ওই প্রার্থীকে।
সূত্রের খবর, ভোটে জিততে একটি বড় অংশের তৃণমূল প্রার্থীরাই যে যাঁর মতো পেরেছেন শাসন, খড়িবাড়ি, বামনগাছি, কদম্বগাছি, রাজারহাটের মতো এলাকা থেকে লোকজন ডেকে এনেছেন। ওই সব এলাকার পরিচিত নেতাদেরও রবিবার বারাসতে দেখা যায়। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বারাসতে ভোটদানের হার ছিল ৮০ শতাংশ। কিন্তু সেই ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
সোমবারও বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান বামপন্থীরা।
এক নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন নির্দল কোঅর্ডিনেটর ছিলেন হাফিজ কাজি আরিফ রেজা। তৃণমূলে যোগও দিয়েছিলেন। মহিলা ওয়ার্ড হয়ে যাওয়ায় সেখানে তৃণমূল যাঁকে প্রার্থী করে, রেজা তাঁকে মানতে চাননি। তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে স্ত্রী মাহফুজা খাতুনকে দাঁড় করান। এ দিন রেজার অভিযোগ, ‘‘আমাদের এলাকাছাড়া করে দেওয়া হয়েছে। শুনলাম, কাজিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ৭৮ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছিল। তার পরে প্রকৃত ভোটারদেরই বুথ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’’
বারাসত সংসদীয় জেলার তৃণমূল সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী। রবিবার তিনি নিজের ওয়ার্ডে বাম ও বিজেপি প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। প্রশ্ন ওঠে, দলের অন্য নেতা-কর্মীদের সেই রাজনৈতিক সৌজন্য দেখাতে তিনি কড়া নির্দেশ দিলেন না কেন? সিপিএম নেতা কৃষ্ণ বসুর কথায়, ‘‘সৌজন্য দেখাতে আমাদের প্রার্থী মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন। কিন্তু ওঁরা সৌজন্য বজায় রাখলেন না।’’
অশনিবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। যেখানে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি ও নির্দল একযোগে গোলমাল করেছে, সেখানে আমাদের কর্মীরা ধৈর্য হারান। কী ভাবে বিরোধীরা একজোট হয়েছে, তার অডিয়ো ক্লিপও আমার কাছে রয়েছে।’’