উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে বাম নেতা-কর্মীরা। ছবি— বিশ্বনাথ বণিক
বেলা গড়িয়ে তখন দুপুর। বারাসতের অশ্বিনীপল্লি থেকে খানিকটা দূরে একটি স্কুলের বাইরে দেখা গেল, একদল যুবক হাতের ইশারায় তিন, পাঁচের মতো বিভিন্ন সংখ্যা দেখাচ্ছেন। সংবাদপত্রের প্রতিনিধির সঙ্গে চোখাচোখি হতেই শাসকদলের প্রতীকওয়ালা ব্যাজ পরে থাকা এক যুবক বলে ওঠেন, ‘‘মানুষ ভোট দিচ্ছেন। শান্তিতে ভোট হচ্ছে।’’
তবে তার খানিক ক্ষণ আগেই বারাসতের নবপল্লির একটি বুথে ভোট দিয়ে এসে এক যুবক জানিয়েছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। বুথে ঢুকে তিনি দেখেন, ভোটার তালিকায় তাঁর ভোট পড়ে গিয়েছে বলে চিহ্নিত ছিল। কিন্তু মুখ চেনা হওয়ায় তাঁকে কেউ আটকাননি। তাই কার ভোট দিয়েছেন, তিনি জানেন না। কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নিলয় বারুই নামে এক যুবকেরও অভিযোগ, ‘‘গিয়ে শুনলাম, আমার ভোট পড়ে গিয়েছে।’’
এ দিন বারাসতের টাকি রোড, যশোর রোডে মাঝেমধ্যেই দেখা মিলেছে বাইক বাহিনীর। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ন’পাড়া কালীবাড়ি এলাকায় দেখা যায়, ক্ষুব্ধ ভোটারেরা ভোট দিতে না-পেরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছেন। ঠিক তখনই দেখা গেল, ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর, বাম প্রার্থী রত্না ভট্টাচার্য ধাওয়া করেছেন কয়েক জন মহিলাকে। অভিযোগ, তাঁরা বহিরাগত।
দিনভর বারাসতের বিভিন্ন বুথ চত্বরে ‘শান্তিতে’ ভোটের এমন টুকরো টুকরো ছবিই চোখে পড়ল। বারাসত পুর এলাকার সিপিএম এবং বিজেপি— দুই বিরোধী দলেরই অভিযোগ, আগের রাত থেকেই সর্বত্র চমকানি-ধমকানি চলছিল। দু’নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী অধীর বেরাকে মারধর করেই শুরু হয় সকাল। বেলা গড়াতেই দলে দলে বহিরাগতেরা এসে ছাপ্পা ভোট দিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ দিন সকালেই ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। স্কুলের একটি বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলে ইভিএম আছড়ে ভেঙে দেন বিজেপি প্রার্থী শ্যামলী দাশগুপ্ত। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়।
এ দিন দীর্ঘক্ষণ আলোচনায় ছিল এই পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড। সকালে এখানকারই রাসবিহারী স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে বিজেপি প্রার্থী কৌশিক মজুমদার জানান, তিনি ও তাঁর এজেন্টরা ভোট বয়কট করছেন। তিনি বলেন, ‘‘বহিরাগতদের আনিয়ে ছাপ্পা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ঠেকাতে পারছি না। তাই ভোট বয়কট করছি।’’ আবার এই ওয়ার্ডের ভিতরে ঘুরতে থাকার কারণে ১২ নম্বর রেলগেটের সামনে সংবাদমাধ্যমকে নিশানা করতে যায় দুষ্কৃতীরা। সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে রেললাইন থেকে পাথর তুলে ছোড়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এক জনকে গ্রেফতার করে।
দুপুরে বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে ধর্না দেয় বামফ্রন্ট। সেখান থেকে তাদের লাঠিপেটা করে পুলিশ সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। সিপিএম নেতা দেবব্রত বসু জানান, সন্ত্রাসের কারণে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন, ১, ৩, ৬, ১০, ২১ এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিতে। যদিও বারাসত সংসদীয় জেলার তৃণমূল সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। মানুষ ভোট দিয়েছেন। বামেরা সারা দিন ভোট করার পরে দিনের শেষে প্রার্থী প্রত্যাহার করেছেন। আসলে মানুষ যে সঙ্গে নেই, সেটা ওঁরা বুঝে গিয়েছেন।’’
অন্য দিকে, ততটা ঘটনাবহুল না হলেও নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডে বাম প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে বন্দুকের বাট দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে মধ্যমগ্রাম পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের নুরন্নবি সিনিয়র মাদ্রাসা স্কুলে। সেখানেও আক্রান্ত হয়েছেন সাংবাদিকেরা।