সুন্দরবনের জনপদগুলির বাসিন্দারা বলছেন, আবার নদীতে মাছের আনাগোনা বেড়েছে।
পাখিরা ফিরছে। শান্ত সকালে নদীর পাড় ঘেঁষে জল কেটে যেতে দেখা যাচ্ছে আড়-বোয়ালদের। পাখিদের মতো ওই মাছেরা পরিযায়ী ছিল না কখনও। একটা সময় সুন্দরবনের জনপদ লাগোয়া নদী-খাড়িগুলিতে সারা বছর মিলত খলসে, তোপসের মতো স্বাদু দেশি ছোট মাছ। কিন্তু পর্যটকদের আনাগোনা, ভুটভুটি-লঞ্চের দাপাদাপিতে এক সময়ে বিদায় নিয়েছিল তারা। লকডাউনে সে সব টানা বন্ধ। কারখানা বন্ধ বলে দূষণ নেই নদীর জলে। সুন্দরবনের জনপদগুলির বাসিন্দারা বলছেন, আবার নদীতে মাছের আনাগোনা বেড়েছে। আশার খবর শুনিয়েছেন পরিবেশবিদেরাও— এ বারের বর্ষায় ইলিশ মিলবে বেশি।
পরিবেশবিদদের মতে, সুন্দরবনের নদীগুলি দূষিত হয় মূলত বিভিন্ন ছোটখাটো কলকারখানার জন্য। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় নদীর পাশেই রয়েছে পোশাক রঙ করার কারখানা। ব্যাটারি তৈরি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ-সহ রয়েছে আরও বেশ কিছু কারখানাও। ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য সরাসরি নদীতে মেশে। এমনকী, পর্যটকদের জন্য যে সব লঞ্চ এবং ভুটভুটি চলে, সেগুলি থেকেও দূষিত হয় নদীর জল। জলের উপরে জ্বালানি তেলের একটা আস্তরণ তৈরি হয়, যা জলজ প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রই আসলে ছারখার হয়ে গিয়েছিল দূষণের জন্য।
লকডাউনের পর থেকে সুন্দরবনের নদীগুলিতে পর্যটকদের আনাগোনা সম্পূর্ণ বন্ধ। স্থানীয় যাত্রী পারাপারের জন্য যে সব খেয়া নৌকো চলত, তা-ও প্রায় বন্ধ। নদী এখন শান্ত। ইছামতী, বিদ্যাধরী, রায়মঙ্গল নদীর এমন টলটলে জল বহু দিন দেখেননি তাঁরা, জানাচ্ছেন স্থানীয় বহু মানুষ। সুন্দরবনের নদীগুলিতে পর্যটকদের আনাগোনা যত বেড়েছে, ততই দূষিত হয়েছে নদীগুলি। প্লাস্টিক এবং থার্মোকলে যথেচ্ছ ভাবে দূষিত হয়েছে জল। ফলে লোকালয়ের কাছাকাছি এলাকায় নদীগুলিতে জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমেছে।
দূষণের ফলেই মাছ-সহ অন্যান্য জলজ প্রাণীদের পক্ষে তা ধীরে ধীরে বাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, নদীর কোনও এলাকায় যখন মাছের স্বাভাবিক প্রজনন বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে ধীরে ধীরে মাছ অমিল হতে থাকে। সুন্দরবনে লোকালয় লাগোয়া নদীগুলির অবস্থা তেমনটাই হয়েছিল। শীতকালে রায়মঙ্গল, কালিন্দি, ডাসা-সহ বিভিন্ন নদীর জল থার্মোকলে ভরে থাকত বলে অভিযোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সুন্দরবনের নদীগুলিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। ফলে নদীতে জীব-বৈচিত্র্য যে ভাবে ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছিল, তার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সুন্দরবনের নদীতে চিংড়ি, পার্সে, গুলে-সহ বিভিন্ন মাছ প্রায় অমিল হয়ে পড়েছিল। সেগুলি ফিরছে। তারা যদি স্বাভাবিক প্রজননের জন্য এ সব এলাকাকে বেছে নেয়, তা হলে জেলেদের জালে বেশি করে পড়বে মাছ। চিংড়ির পোনা অর্থাৎ মিন ধরার যে প্রবণতা রয়েছে, তা-ও এখন বন্ধ। ফলে চিংড়ির পরিমাণ বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, “লকডাউনের সময়ে গঙ্গার জল পরীক্ষা করে বহু পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করেছি। দূষণের মাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটাই কমেছে। আমরা নিশ্চিত, সুন্দরবন এলাকার নদীতেও একই ফল মিলবে।” তিনি আরও বলেন, “লকডাউন উঠলেও আমরা যেন প্রকৃতির স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখি।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)