প্রতীকী ছবি।
যানবাহনের সমস্যা তো রয়েছেই। তার মধ্যে পরিচয় গোপন রাখতে গিয়ে ওষুধ কিনতে সমস্যায় পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এইচআইভি আক্রান্তেরা।
জেলায় এইচআইভি আক্রান্তদের জন্য কাজ করে একটি সংগঠন। তারা জানিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। সকলকেই রোজ ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু এখন অনেকেই ওষুধের সঙ্কটে পড়েছেন। কারও কাছে ওষুধের মজুত শেষ। কেউ কেউ আবার পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় দু’তিন দিন অন্তর ওষুধ খাচ্ছেন। সংগঠনের সভাপতি সমীর বিশ্বাস বলেন, ‘‘রোজ ওষুধ না খেলে ওষুধ কাজ করবে না। দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটবে। জেলার ৫০ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ এখন ওষুধের সমস্যায় ভুগছেন।’’
কেন ওষুধের সমস্যা?
সমীর জানান, সরকারি ভাবে এইচআইভি আক্রান্তদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে না। গাড়ি চলাচল না করায় আক্রান্তেরাও নিজেরা হাসপাতাল থেকে ওষুধ সংগ্রহ করতে পারছেন না। সংগঠনের পক্ষে বারাসত জেলা হাসপাতাল থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যানবাহনের সমস্যার জন্য তাঁদের পক্ষেও সব সময়ে তা সম্ভব হচ্ছে না।।
সংঠনের কাছে আক্রান্তদের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর আছে। কিন্তু অনেক ঠিকানা ভুল বলে জানালেন সংগঠনের কর্মকর্তারা। তাঁদের ঠিকানায় যোগাযোগ করে খোঁজ মিলছে না। ফলে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় হাবড়া ও মছলন্দপুর এলাকার আরও দু’টি সংগঠন আক্রান্তদের ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনও ওষুধ পৌঁছে দিয়ে সাহায্য করছে। হাবড়ার একটি সংগঠনের কর্তা ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার বলেন, ‘‘দেগঙ্গা থানা এলাকার তিন ব্যক্তি এক সপ্তাহ ওষুধ না খেয়ে ছিলেন। খবর পেয়ে আমরা বারাসত থেকে ওষুধ নিয়ে তাঁদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।’’
সংগঠনের কর্মীদের অভিজ্ঞতা, পরিচয় গোপন রাখতে গিয়ে অনেকে পুলিশ-প্রশাসনকে তাঁদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন না। সমীর বলেন, ‘‘সামাজিক কারণে আক্রান্তেরা পরিচয় প্রকাশ করতে ভয় পান। তাঁদের ওষুধ পেতে আরও সমস্যা হচ্ছে।’’
গোরবডাঙার এক দম্পতি এবং তাঁদের শিশু সন্তান তিন জনেই এইচআইভি আক্রান্ত। তাঁরা ওষুধের জন্য সমীরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সমীর তাঁদের থানায় যোগাযোগ করতে বললে, তাঁরা সেখানে যাননি। পরে সমীরের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন না। সমীরের দাবি, ‘‘এআরটি সেন্টারগুলি থাকা এইচআইভি আক্রান্তদের নামের তালিকা দেখে সরকারি ভাবে তাঁদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে। না হলে সমস্যা মিটবে না।’’
সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, এইচআইভি আক্রান্তদের জন্য এআরটি (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) সেন্টার রয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আরজিকর হাসপাতাল, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতে এআরটি সেন্টার বারাসত জেলা হাসপাতালে। লিঙ্ক এআরটি সেন্টার রয়েছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল ও ব্যারাকপুরে বিএন বসু স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। এইচআইভি আক্রান্তদের ওই এআরটি কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। কাউন্সেলিং হয়। সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজেদের পরিচয় যাতে গোপন থাকে, সে জন্য বনগাঁ এইচআইভি আক্রান্ত রোগী বারাসত হাসপাতাল থেকে, আবার বারাসতের আক্রান্তেরা অনেকে কলকাতার হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে আসতেন। সেই সব মানুষজন এখন সমস্যায় পড়েছেন।
বনগাঁর বাসিন্দা এক এইচআইভি আক্রান্ত মহিলা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পান। লকডাউনের জেরে যানবাহন বন্ধ। ফলে ওই মহিলার পক্ষে কলকাতায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বনগাঁ হাসপাতালে সব ধরনের ওষুধ নেই। ফলে তিনি পাননি। কয়েক দিন পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে বারাসত হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়।