প্রতীকী ছবি।
দমকল কেন্দ্রে ইঞ্জিন রয়েছে চারটি। কিন্তু সেই চারটি ইঞ্জিন চালানোর জন্য চালকের সংখ্যা মাত্র এক। এমনই পরিস্থিতি ডায়মন্ড হারবার দমকল কেন্দ্রের। স্থানীয় সূত্রের খবর, কোনও অগ্নিকাণ্ডে একাধিক ইঞ্জিনের দরকার হলে চালক একটা ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে রেখে আবার দমকল কেন্দ্রে এসে পরবর্তী ইঞ্জিনটি নিয়ে যান।
২০০৬ সালে ডায়মন্ড হারবার দমকল কেন্দ্রটি চালু হয়। ডায়মন্ড হারবার ১ ও ২ ব্লক, মগরাহাট ১ ও ২ ব্লক, কুলপি, মন্দিরবাজার, মথুরাপুর ১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের ভরসা এই দমকল কেন্দ্র। কিন্তু বর্তমানে কর্মীর সংখ্যা মাত্র ৩২ জন। এর মধ্যে অস্থায়ী কর্মী ১৫ জন। এঁদের অনেকেরই প্রশিক্ষণ নেই। অভিযোগ, সব কর্মীদের অগ্নি নিরোধক পোশাকও নেই। পর্যাপ্ত গ্যাস মুখোশের অভাব। তিনতলা পর্যন্ত উচ্চতায় স্কাই ল্যাডারের ব্যবস্থা থাকলেও, তার বেশি উঁচুতে ওঠার ব্যবস্থা নেই।
কাকদ্বীপ দমকল কেন্দ্রে ইঞ্জিন রয়েছে দু’টি। সেখানেও চালক মাত্র একজন। ২০১৬ সালে কাকদ্বীপ শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরে গণেশনগর গ্রামের কাছে কাকদ্বীপ দমকল কেন্দ্রটি চালু হয়। অভিযোগ, সেখান থেকে গাড়ি বের করতে হলে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। সেখানে ঢোকার মুখে বড় গেট রয়েছে। ওই গেট রাতে বন্ধ থাকে। ফলে বেশি রাতে কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ইঞ্জিন বেরোনোর জন্য গেট খুলতেই সময় লেগে যায়।
কাকদ্বীপের ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ওই কেন্দ্রটি। এই এক কিলোমিটার পথের অনেকটাই বেশ সঙ্কীর্ণ। রাস্তায় অন্য গাড়ি থাকলে আর ইঞ্জিন নিয়ে এগোনোর পথ থাকে না। এই কেন্দ্রে কর্মী রয়েছেন ৪৩ জন। এর মধ্যে অস্থায়ী কর্মী ২৬ জন। কর্মীদের জন্য মাত্র দু’টি অগ্নিনিরোধক পোশাক ও গ্যাস মুখোশ রয়েছে। এই কেন্দ্রেও তিনতলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর জন্য ল্যাডারের ব্যবস্থা আছে। ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরে পাথরপ্রতিমা বা ৬০ কিলোমিটার দূরে বকখালিতে কোনও অগ্নিকাণ্ড হলে কাকদ্বীপ থেকেই ইঞ্জিন পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে যেতেই সময় লাগে দেড়-দু’ঘণ্টা।
ক্যানিং মহকুমার একমাত্র দমকল কেন্দ্রটি উদ্বোধন হয় ২০১৬ সালে। তবে এখনও পর্যাপ্ত কর্মী ও প্রয়োজনীয় নানা জিনিসের অভাব রয়েছে। দু’জন অফিসার, চারজন লিডার, তিনজন ফায়ার অপারেটর, তিনজন চালক ও ১৯ জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন এই কেন্দ্রে। আগুনের সঙ্গে লড়াইয়ের সরঞ্জাম বলতে দু’টি ইঞ্জিন, দু’টি সাধারণ পাম্প সেট, একটি উন্নত পাম্প সেট, একটি ৩০ ফুটের সিঁড়ি, একটি মোটর বাইক, দু’টি কার্বন ডাই অক্সাইডের সিলিন্ডার ও একটি পিকআপ ভ্যান। এই সামান্য আয়োজন নিয়ে বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে লড়াই করা কার্যত সম্ভব নয়, সেটা মানছেন কর্মীরাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দমকল কর্মী বলেন, ‘‘সকলের হেলমেট পর্যন্ত নেই।’’
জেলার অন্যতম পুরনো দমকল কেন্দ্রটি রয়েছে বারুইপুরে। ২০০০ সালে তৈরি এই কেন্দ্রে ইঞ্জিন রয়েছে দু’টি। কর্মী সংখ্যা মাত্র তিরিশ। এক আধিকারিক জানান, কর্মী ও সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। বড় অগ্নিকাণ্ড হলে আশেপাশের নানা জায়গা থেকে ইঞ্জিন চেয়ে পাঠাতে হয়। দিন কয়েক আগেই কাছারি বাজারে আগুন লাগে। সে সময়ে বেহালা, পাটুলি থেকে একাধিক ইঞ্জিন এনে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছিল। মহকুমা শহরগুলি ছাড়া ফলতা, সাগর, জয়নগরে দমকল কেন্দ্র রয়েছে। তবে কর্মী সঙ্কট ও পরিকাঠামোর অভাবের অভিযোগ রয়েছে প্রায় সর্বত্রই। (শেষ)