প্রীতি মণ্ডল। ছবি: নবেন্দু ঘোষ
সারা দিন পোস্ট অফিসের কাজ সেরে রাত জেগে পড়াশোনা চালিয়েছে প্রীতি মণ্ডল। হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলও পেয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৫৩ (প্রায় ৯০ শতাংশ)। হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের ছাত্রী প্রীতির এই সাফল্যে খুশি সকলে।
আমবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা, দিনমজুর সত্যজিৎ মণ্ডলের পক্ষে সংসার চালাতেই হিমশিম অবস্থা। মেয়ে প্রীতির পড়াশোনার খরচ সামলানো তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ দিকে, মেধাবী প্রীতি হাল ছাড়তে নারাজ। মাধ্যমিকে ৯৬ শতাংশ নম্বর পাওয়ার পর থেকেই কাজ খুঁজতে শুরু করে। বছরখানেক পরে জানতে পারে, পোস্ট অফিসে কর্মী নেওয়া হচ্ছে। আবেদন করে। মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে পোস্ট অফিসের অস্থায়ী কাজ পেয়েও যায়।
প্রীতি জানায়, চার-পাঁচ মাস ধরে কাজ করছে সে। মাসে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করে। তা দিয়ে কোনও রকমে সংসার চলছে। প্রীতি শ্বাসকষ্টে ভোগে। প্রতি মাসে ইনহেলার বাবদ নিয়মিত খরচ রয়েছে। সেই খরচ এবং নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছে সে। হিঙ্গলগঞ্জ ডাকঘর থেকে চিঠিপত্র নিয়ে সান্ডেলেরবিল শাখা ডাকঘরে নিয়ে যেতে হয় দিনে দু’বার। পরীক্ষার আগে এই কাজের সঙ্গে স্কুল ও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যেত প্রীতি। রাতে নিজের পড়া করত। পারিবারিক আর্থিক অনটনের জেরে কিছু বই ঋণ করে কিনতে হয়েছিল প্রীতিকে। কাজে নিযুক্ত হয়ে সব ঋণ পরিশোধ করেছে এই কৃতী ছাত্রী। স্বল্প উপার্জনের টাকা থেকেই দিত ইংরেজি ও শিক্ষাবিজ্ঞানের দু’জন গৃহশিক্ষকের বেতন।
জরাজীর্ণ মাটির ঘরে মা-বাবার সঙ্গে থাকে প্রীতি। মা তাপসী বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলেই বইখাতা গুটিয়ে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়তে হয়। মেয়ের এত কষ্ট যে সার্থক হয়েছে, সে জন্য আমরা গর্বিত।”
ভবিষ্যতে ইংরেজির শিক্ষিকা হতে চায় প্রীতি। তার কথায়, “স্কুলের শিক্ষকেরা খুব সাহায্য করেছেন।” প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী বলেন, “কাজ ও পড়াশোনা দু’টি দিক এক সঙ্গে যে ভাবে চালিয়ে গিয়েছে প্রীতি, তা প্রশংসাযোগ্য। ওর এই ফল আমাদের কাছে খুবই আনন্দের। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে আমাদের স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর প্রীতিই পেয়েছে। ওর পাশে আগামী দিনেও থাকব আমরা।”
প্রীতির এই ফলাফলে খুশি হিঙ্গলগঞ্জ পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার মানবেন্দ্র দাস। তিনি বলেন, “আমাদের সহকর্মী প্রীতি কাজ সামলে এত ভাল ফল করায় আমরা খুবই খুশি। ওর ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা রইল।”