নদী ঢেকে গিয়েছে কচুরিপানায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
আগে নদী ছিল খরস্রোতা। বর্তমানে কচুরিপানা আর আগাছায় ঢাকা যমুনা নদীর বুকে আর জোয়ার-ভাটাটুকুও খেলে না। কোথাও কোথাও নদী স্রোত হারিয়ে ডোবার চেহারা নিয়ে বয়ে গিয়েছে গ্রামের আনাচে-কানাচে।
গাইঘাটার গাজিপুর গ্রামের বর্ষীয়ান বাসিন্দা নারায়ণ আঁশের বাড়ির কাছ দিয়ে দিয়ে বয়ে গিয়েছে মৃতপ্রায়, নাব্যতা হারানো যমুনা। কচুরিপানা ও শ্যাওলায় মুখ ঢাকা নদীর দিকে তাকিয়ে নারায়ণ বললেন, ‘‘ছোটবেলায় নদীতে প্রবল স্রোত ছিল। জোয়ার-ভাটা খেলত। নৌকোয় করে গাইঘাটা হাটে আনাজ, ধান, পাট নিয়ে আসতাম। এখন তো কচুরিপানার কারণে নদীতে স্নানও করা যায় না। নদীটার দিকে তাকালে মন খারাপ হয়ে যায়।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বছর তিরিশ আগেও যমুনায় নৌকো বেয়ে, মাছ ধরে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন নৌকো চলে না। মৎস্যজীবীরা পেশা বদলে খেতমজুরি, দিনমজুরি করছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে যমুনার মূল ধারা ভাগীরথী থেকে উৎপন্ন হয়ে ইছামতী পর্যন্ত প্রবাহিত হত। নদীটি নদিয়া জেলা থেকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রবেশ করেছে। যমুনা নদী হরিণঘাটা, গোপালনগর, গাইঘাটা, গোবরডাঙা হয়ে স্বরূপনগরে চারঘাটা এলাকায় ইছামতী নদীতে মিশেছে। গতিপথ প্রায় ৮০ কিলোমিটার। গাইঘাটা ব্লকে যমুনা নদী বয়ে গিয়েছে প্রায় ১২ কিলোমিটার। আগে গাইঘাটা ও গোবরডাঙা শহরের নিকাশির প্রধান মাধ্যম ছিল যমুনা। কিন্তু এখন নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় বর্ষার ভারী বৃষ্টিতে নদীর জল উপচে লোকালয়ে ঢুকে এলাকা প্লাবিত করে। কৃষিজমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়।
ফি বছর গোবরডাঙা পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড যমুনার জলে প্লাবিত হয়ে পড়ে। পুরপ্রধান শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘ছোটবেলায় এই নদীতে সাঁতার কেটেছি। মানুষ নৌকোয় যাতায়াত করতেন। এখন নদী কচুরিপানায় আবদ্ধ। কয়েক বছর আগে নদী একবার সংস্কার করা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। ফের পলি জমেছে। পূর্ণাঙ্গ নদী সংস্কারের দাবি সেচ দফতরের কাছে জানানো হয়েছে।’’
গাইঘাটা বাজারের কাছে যশোর রোডে সেতুর উপরে গিয়ে দেখা গেল, গোটা নদীটাই কচুরিপানার তলায় চলে গিয়েছে। স্থানীয় এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘২০০০ সালে ভয়াবহ বন্যার আগেও নদীর এই করুণ অবস্থা ছিল না।’’ এক যুবক বলেন, ‘‘২০০০ সালের আগেও নৌকো করে আত্মীয়ের বাড়িতে যেতাম। এখন আর নৌকো চলে না।’’
গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘কয়েক বার নদী থেকে কচুরিপানা তোলা হয়েছিল। পলি তুলে সংস্কার হয়েছিল। কিন্তু নদীর হাল ফেরেনি। বিক্ষিপ্ত ভাবে নদী সংস্কার করে লাভ হবে না। পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি। বিষয়টি সেচ দফতর এবং বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’