কাজ শুরু হয়নি পথশ্রী প্রকল্পে থাকা রাস্তার। বনগাঁর খেদাপাড়ায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
মাসখানেক হতে চলল, ঘোষণা হয়েছে প্রকল্প। তবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় পথশ্রীর অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ রাস্তার কাজ এখনও শুরুই হল না।
২৮ মার্চ গোটা রাজ্যের পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় পথশ্রী প্রকল্পে বেশ কিছু রাস্তার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটা করে কাজের শিলান্যাস হয়েছিল। গ্রামের মানুষ আশা করেছিলেন, এ বার হয় তো কাজ শুরু হবে। যাতায়াতের সমস্যা মিটবে। কিন্তু ওই কাজে গতি না আসায় মানুষ হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কাজ শুরু করতে না পারলে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ভোটারদের মধ্যে, মনে করছেন জেলা তৃণমূলের কেউ কেউ। তবে কাজ ভোট ঘোষণার আগে শুরু হয়ে যাবে বলেও তাঁদের আশা।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় পথশ্রী প্রকল্পে ৪৮০টি রাস্তা হওয়ার কথা। এর মধ্যে রাস্তা মেরামতি এবং নতুন রাস্তার কাজ রয়েছে। ৫৬৬ কিলোমিটার রাস্তার কাজ হবে। খরচ ধরা হয়েছে ১৬১ কোটি টাকা। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী বলেন, "জেলায় ৮৫ শতাংশের উপরে রাস্তার কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। কিছু রাস্তার কাজ শুরুও হয়েছে।"
কেন বেশিরভাগ রাস্তার কাজ শুরু করা যায়নি?
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তার কাজ করতে ঠিকাদারদের একাংশ অনীহা প্রকাশ করছেন। অনেক ঠিকাদার পুরনো কাজের টাকা পাননি। ফলে তাঁরা নতুন করে আর কাজ করতে চাইছেন না। জেলার এক পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বলেন, "কিছু ঠিকাদারের আশঙ্কা, সরকারি কোষাগারের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। এই অবস্থায় নতুন কাজ ধরলে টাকা পেতে দেরি হতে পারে। তবে এটা কোনও কারণ হতে পারে না। তাঁরা ঠিকই টাকা পাবেন।" জেলার এক ঠিকাদারের কথায়, "আমি আগেই ৭টি আইসিডিএস কেন্দ্রের কাজ করেছি। ৭০ লক্ষ টাকা পাব। সেই টাকা পাইনি। তাই রাস্তার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যোগ দিইনি। নতুন করে বিপদে পড়তে চাই না।" অন্য এক ঠিকাদারের কথায়, "অনেকের আগ্রহ না থাকলেও রাস্তার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছেন। সরকারের বিরাগভাজন হলে ভবিষ্যতে কাজ পেতে অসুবিধা হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। তবে বরাত পেলেও
কেউ কেউ কাজ শুরু করতে দেরি করছেন।"
এ বিষয়ে নারায়ণ বলেন, "যদি কোনও সমস্যা থাকে, প্রশাসনিক ও জেলা পরিষদ স্তরে পদক্ষেপ করা হবে। ইদের পরে পুরো গতিতে কাজ শুরু হয়ে যাবে।" জেলা প্রশাসনের কর্তা আবার বলেন, "ঠিকাদারেরা কাজ করছেন না, এটা ঠিক নয়। আমি হাবড়া ২ ব্লকে তদন্তে এসে দেখলাম, কাজ হচ্ছে। বাকি কাজ ধীরে ধীরে শুরু হয়ে যাবে।"
এ দিকে, রাস্তার কাজ শুরু না হওয়ায় সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, "একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের এখন নড়বড়ে অবস্থা। পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের আগে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে রাস্তার শিলান্যাস করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। টাকা থাক আর না থাক, ভাবা হয়নি। কিছু কাজ হয় তো হবে। কিন্তু কবে হবে, কেউ জানে না।" তাঁর দাবি, "এই সরকার ঠিকাদারদের পুরনো বকেয়া দিতে পারেনি বিভিন্ন প্রকল্পে। ফলে ঠিকাদারেরা নতুন করে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন।" বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দেন। শিলা পোঁতেন। কিন্তু বাস্তবে কাজ হয় না। ওঁর নাম তো শিলা দিদি হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের ৬ লক্ষ কোটি টাকা দেনা। ঠিকাদারদের আগের প্রচুর টাকা পাওনা আছে। ফলে নতুন করে তাঁরা রাস্তার কাজ করার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।"
বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "রাস্তার কাজের অনুমোদন হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। অনুমোদন হওয়ার পরে কাজ শুরু করতে কিছু সময় তো লাগবেই। ঠিকাদারেরা কাজ করতে চাইছেন না, এটা ঠিক নয়।"
এই পরিস্থিতিতে রাস্তার কাজ শুরু না হওয়ায় মানুষ হতাশ। বনগাঁ ব্লকের ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের খেদাপাড়া থেকে কালিয়ানি পর্যন্ত পিচের রাস্তা হওয়ার কথা পথশ্রী প্রকল্পে। রাস্তার পাশে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দিয়ে বোর্ড লাগানো হয়েছে। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি। এখন রাস্তায় প্রচুর ধুলো। বৃষ্টি হলে কাদা হবে। রাস্তার কাজ দ্রুত শুরু না হলে শিলান্যাস করা হল কেন, এ প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ অবশ্য বলেন, "টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে
গিয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া
হয়েছে। শুধু ইঞ্জিনিয়ারদের কিছু কাজ বাকি।"