চলছে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
টাকার বিনিময়ে বেআইনি ভাবে আশাকর্মী নিয়োগের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখালেন এক দল গ্রামবাসী। বৃহস্পতিবার সকালে বনগাঁ ব্লকের গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা। বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় গঙ্গানন্দপুর সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আশাকর্মীর চাকরি বিক্রির প্রতিবাদে সমস্ত মানুষ এক হও।’ ঘণ্টা দু’য়েক বিক্ষোভ চলার পরে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। খোলা হয় সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তালা।
বিক্ষোভকারীদের তরফে আলি হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘মামুদপুরের বাসিন্দা রোজিনা মণ্ডলের আশাকর্মী পদে চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। তাঁকে বঞ্চিত করে অন্য এক মহিলাকে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এই কাজের সঙ্গে বনগাঁর বিএমওএইচ জড়িত। আমাদের দাবি, তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে।’’
গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের জাফর আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারি আধিকারিকেরা এই নিয়োগ করেন। এর সঙ্গে জনপ্রতিনিধিরা যুক্ত থাকেন না। স্বচ্ছ ভাবে এই নিয়োগ করা হয়নি। আধিকারিকদের কাছ থেকে এটা আমরা আশা করিনি।’’
পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, যে এলাকায় আশাকর্মীর পদে নিয়োগ প্রয়োজন, সেই গ্রামের বাসিন্দারাই পদপ্রার্থী হিসাবে প্রাধান্য পাবেন। নির্দিষ্ট গ্রাম থেকে কোনও আবেদন জমা না পড়লে পাশের গ্রাম থেকে কর্মী নিয়োগ করা যাবে। মামুদপুর গ্রামে আশাকর্মী নিয়োগের সময়ে ৫টি গ্রাম থেকে আবেদনপত্র জমা পড়ে। স্থানীয় বলিয়ানপুর ও মোল্লাহাটি থেকে একটি করে, অম্বিকাপুর থেকে দু’টি এবং মামুদপুর থেকে একটি আবেদন জমা পড়েছিল। জাফর বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী, বাকি ৪টি আবেদনপত্র বাতিল হওয়ার কথা। মামুদপুর থেকে একমাত্র আবেদনকারী ছিলেন রোজিনা মণ্ডল। তাঁকেই নিয়োগ করার কথা। কিন্তু বিএমওএইচ তা করেননি।’’
রোজিনা জানান, গত বছর মে মাসে তিনি আশাকর্মী পদের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সম্প্রতি জানতে পারেন, তাঁর বদলে অম্বিকাপুর গ্রামের এক মহিলাকে নিয়োগ করা হয়েছে। রোজিনা বলেন, ‘‘ওই মহিলা অম্বিকাপুর গ্রামেরও স্থায়ী বাসিন্দা নন। তিনি গাইঘাটার ঠাকুরনগরে। ’’
ইতিমধ্যেই রোজিনা ওই নিয়োগের প্রতিবাদে জেলা স্বাস্থ্য দফতর, মহকুমা প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
বেনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায়। তিনি বলেন, ‘‘আশাকর্মীর নিয়োগ হয় ৫ জনের একটি কমিটির মাধ্যমে। সেখানে এসডিও, বিডিওরা থাকেন। কোনও ব্যক্তি একক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যাঁরা ঘণ্টা দুয়েক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে পরিষেবা বন্ধ রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে প্রশাসনকে বলেছি।’’ বনগাঁর মহকুমাশাসক প্রেমবিভাস কাঁসারি বলেন, ‘‘একটা অভিযোগ পেয়েছিলাম। অবশ্যই তদন্ত হবে। নিয়োগে কোনও পদ্ধতিগত ত্রুটি প্রমাণিত হলে পদক্ষেপ করা হবে।’’
প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সরকারি নথি অনুযায়ী মামুদপুর ও অম্বিকাপুরকে একটি গ্রাম হিসেবেই দেখানো আছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে।