Bangaon

ফলক পোঁতা হলেও নালার কাজ হয়নি, ক্ষোভ গ্রামবাসীদের

পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, একটি পাকা নিকাশি নালা তৈরি হওয়ার কথা ছিল  চন্দ্রকান্ত রোডের পাশে। অন্যটি স্থানীয় ভরঘুরে আবাসন থেকে জয়ন্তীপুর সেতু পর্যন্ত যশোর রোডের পাশ থেকে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৫৩
Share:

অসম্পূর্ণ: শেষ হয়নি নালার কাজ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

দীর্ঘ দিন ধরে গ্রামের নিকাশি বেহাল। একাধিক বার পাকা নিকাশির দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু তা পূরণ হয়নি। দু’টি নালা তৈরির উদ্যোগ করা হলেও সেই কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ দিকে, নিকাশি বেহাল হওয়ায় ফি বছর বর্ষায় দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এমনটাই অভিযোগ বনগাঁ ব্লকের ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায়।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০২০ ও ২০২১ সালে পঞ্চায়েতের তরফে দু’টি এলাকায় পাকা নিকাশি নালা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কাজের ফলকও বসানো হয়। আশায় ছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। একটি এলাকায় কিছুটা পাকা নিকাশি নালা তৈরি হয়ে কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। অন্য এলাকায় ফলক বসলেও কাজ শুরুই হয়নি। সামনেই বর্ষার মরসুম আসতে চলেছে। ফের একবার দুর্ভোগে পড়তে হবে ভেবে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা।

পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, একটি পাকা নিকাশি নালা তৈরি হওয়ার কথা ছিল চন্দ্রকান্ত রোডের পাশে। অন্যটি স্থানীয় ভরঘুরে আবাসন থেকে জয়ন্তীপুর সেতু পর্যন্ত যশোর রোডের পাশ থেকে। চন্দ্রকান্ত রোড এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, নালা তৈরির জন্য কাজের ফলক বসানো হয়েছে। ফলকে লেখা, ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প। অর্থ বর্ষ ২০২০-২১। প্রকল্প-চন্দ্রকান্ত রোড থেকে নাওভাঙা নদী পর্যন্ত পাকা ইটের নালা নির্মাণ। আনুমানিক খরচ ৩৯ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ ২৭ হাজার টাকা।’ রাস্তার পাশে কিছুটা অংশে পাকা নিকাশি নালা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ কাজই হয়নি। রাস্তার পাশে মাটি তোলা হয়েছে। এলাকাটি মধ্য ছয়ঘড়িয়ায়। ওই এলাকার এক মহিলা বলেন, ‘‘বর্ষার সময়ে জল জমে যায়। হাঁটাচলা করা যায় না। ভারী বৃষ্টিতে উঠোনেও জল জমে। মশার উপদ্রব শুরু হয়। পাকা নালার কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি হচ্ছে।’’ এলাকার আর এক বাসিন্দা বাপি সাহা বলেন, ‘‘নালা তৈরির সময়ে মাটি রাস্তার পাশে তোলা হয়েছিল। ফলে বৃষ্টি হলে রাস্তা কাদায় ভরে যাচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত নালা তৈরির কাজ শেষ হোক।’’ রাস্তার পাশের এক দোকানি বলেন, ‘‘যেটুকু অংশে পাকা নালা তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে জল বেরোয় না। বৃষ্টির জল নালার মধ্যে জমে থাকছে। মশার প্রকোপ বাড়ছে।’’ ভবঘুরে আবাসন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানেও একটি ফলক পোঁতা আছে। তাতে লেখা, ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প। অর্থ বর্ষ, ২০২১-২২। প্রকল্প ভবঘুরে আবাসন এলাকা থেকে জয়ন্তীপুর সেতু পর্যন্ত। আনুমানিক ব্যয় ১৫ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। রূপায়ণে, ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত।’ পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, এখানে যশোর রোডের পাশ থেকে নালাটি তৈরি হয়ে হাঁকোর নদীতে মেশার কথা ছিল। স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, কাজ যখন হবেই না, তা হলে শিলা পুঁতে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হল কেন? এ বিষয়ে ছয়ঘড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘দু’টি এলাকার বাসিন্দাদের দাবি মেনে একশো দিনের প্রকল্পে দু’টি পাকা নালা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলাম। চন্দ্রকান্ত রোড এলাকায় কাজ শুরুও হয়েছিল। কেন্দ্র সরকার একশো দিনের কাজ প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে কাজ শেষ করা যায়নি। কেন্দ্র টাকা দিলেই আবার কাজ শুরু হবে।’’ যদিও বিরোধীরা সমালোচনা করতে ছাড়ছে না। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিজেপির অশোক কীর্তনিয়া বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো প্রায়ই বলেন কেন্দ্রের টাকা লাগবে না। প্রধান মুখ্যমন্ত্রীকে বলে টাকার ব্যবস্থা করে নালা দু’টি তৈরি করছেন না কেন?’’ বিধায়কের দাবি, ‘‘একশো দিনের কাজ প্রকল্পের বিপুল দুর্নীতি চলে। প্রায় ১ কোটি জব কার্ডের হদিস পাওয়া যায়নি। এত দুর্নীতি হলে কেন্দ্র কেন টাকা দেবে?’’ ছয়ঘড়িয়া এলাকার সিপিএম নেতা গোবিন্দ ঘোষ বলেন, ‘‘শিলা পোঁতা মানে তো কাজ হয়েছে বা কাজ চলছে। আর্থিক বাজেটে পাশ করিয়েই তো পঞ্চায়েত ফলক পুঁতেছিল। তা হলে সেই টাকা গেল কোথায়? ঠিকাদারের সঙ্গে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বনিবনা না হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে আমরা এটি তুলে ধরব।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement