সম্পত্তির করের জন্য গৃহ সম্পত্তির স্ব-ঘোষণা পত্র ঘিরে গ্রামে গ্রামে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের নির্দেশে সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে শুরু হয়েছে গৃহ সম্পত্তির জন্য স্ব-ঘোষণা পত্রপ্রদান কর্মসূচি। পঞ্চায়েত থেকে বিশেষ ফর্ম বিলি করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ বা গৃহ সম্পত্তির খুঁটিনাটি তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করে পঞ্চায়েত অফিসে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ফর্মে করদাতার নাম, অভিভাবকের নাম, ঠিকানা, আধার নম্বর, ফোন নম্বর-সহ পাকা না কাঁচা বাড়ি, পাকা বাড়ি হলে কীসের ছাদ, ক’তলা বাড়ি, ঘরের মেঝে কাঁচা, সিমেন্টের না মার্বেল পাথরের তৈরি, বাড়িতে কটি শোওয়ার ঘর, বসার ঘর, বসতবাড়ির আনুমানিক বাজার মূল্য, বাস্তু জমির পরিমাণ, কৃষি জমির পরিমাণ ইত্যাদি নানা তথ্য চাওয়া হয়েছে।
ভাঙড় ২ ব্লকের শানপুকুর-সহ বেশ কিছু পঞ্চায়েতের তরফে ইতিমধ্যেই ফর্ম বাড়ি বাড়ি বিলি করা হছে। কিন্তু অভিযোগ, সম্পত্তির খুঁটিনাটি তথ্য দিয়ে এই ফর্ম পূরণ করতে চাইছেন না অনেকে। বাসিন্দারা জানান, অতীতে ব্যক্তিগত সম্পত্তির খুঁটিনাটি তথ্য এ ভাবে কখনও চাওয়া হয়নি। এই পদ্ধতিতে সম্পত্তির সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য জমা দিলে বিপুল কর জমা দিতে হবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। শানপুকুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা লালমিয়া মোল্লা বলেন, “আমাদের মতো গরিব মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। উত্তরাধিকার সূত্রে পৈতৃক বাড়ি ও জমির ভাগ পেয়েছি। কিন্তু সেই জমি থেকে কোনও আয় নেই। অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হলে, কী ভাবে সামাল দেব বুঝতে পারছি না।”
এ বিষয়ে শানপুকুর পঞ্চায়েতের প্রধান মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী এই ফর্ম পূরণ করতে অনেকেই আপত্তি করছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। পঞ্চায়েত কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গেলে কটূ কথা বলা হচ্ছে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সৌমেন পাল অবশ্য বলেন, “পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের নির্দেশে একটি ডেটা (তথ্য) ব্যাঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। সে জন্য মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।” তবে প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গৃহ সম্পত্তির স্ব-ঘোষণা পত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ আর সম্পত্তি কর ফাঁকি দিতে পারবেন না। সরকার এ বার থেকে নির্দিষ্ট কর সংগ্রহ করতে পারবে। কর ফাঁকির ফলে এত দিন সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতি হত।
এর ফলে স্থানীয় প্রশাসনে দুর্নীতি কমবে বলে মনে করছে বিরোধীরা। ভাঙড়ের জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসান বলেন, “এই পদ্ধতিতে এ বার থেকে এক দিকে যেমন কর ফাঁকি দেওয়া অনেকটাই বন্ধ হবে, তেমনই আবাস প্লাস ঘরের নামে দুর্নীতিও বন্ধ হবে।”