প্রেমেশ্বরের সঙ্গে সঞ্জিতা। ছবি: সমাজ মাধ্যমের সৌজন্যে
বর্ষীয়ান নাট্যকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলেন অনেকে। সকলেই নাট্যকর্মী নন, বরং বহু নাট্যপ্রেমী দর্শকও এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন। ‘প্রণামী’ নামে এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রবীণ শিল্পীদের হাতে এক বছর ধরে প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা করে তুলে দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। ওই শিল্পীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে যে কোনও সমস্যায় পাশে থাকার অঙ্গীকারও করছেন।
এই পদক্ষেপের অন্যতম উদ্যোক্তা, ‘সবার পথ’ নাট্যদলের নির্দেশক সঞ্জিতা জানালেন, একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রণামীর কথা মাথায় এসেছিল। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিন বর্ষীয়ান শিল্পী সুপ্রিয়াদেবীর একটি ইন্টারভিউ পড়ে মন খারাপ হয়ে যায়। বুঝতে পারি, জীবনের সায়াহ্নে এসে ওঁরা খুব একা হয়ে পড়েন। নাট্যশিল্পীরাও ব্যতিক্রম নন। তারপরেই এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট লিখি ফেসবুকে। তাতে ভাল সাড়া মেলে। সকলে মিলে প্রণামী শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই।’’
গত সাত বছর ধরে এই কাজ করছেন তাঁরা। সঞ্জিতা জানান, বর্তমানে এই কাজের সঙ্গে শ’খানেক মানুষ যুক্ত। ‘একাই একশো নয়, বরং একশো জন মিলে একটি পরিবার’— এই ধারণায় বিশ্বাস নিয়ে চলছেন তাঁরা। সকলে মাসিক চাঁদা তুলে শিল্পীদের কাছে পৌঁছে দেন।
তাঁদের উদ্যোগে খুশি বর্ষীয়ান শিল্পীরাও। সম্প্রতি প্রণামীর সদস্যেরা পৌঁছে গিয়েছিলেন হাবড়ার বাণীপুরের বাসিন্দা, নাট্যশিল্পী প্রেমেশ্বর বাঁড়ুইয়ের বাড়িতে। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি নাটকের সঙ্গে যুক্ত। ছোট এক চিলতে ঘরে নেহাতই সাদামাঠা ভাবে দিন কাটে। তাঁর হাতে প্রণামীর টাকা তুলে দেন সদস্যেরা। প্রেমেশ্বর বলেন, ‘‘ওঁদের এই উদ্যোগে আমি খুবই উপকৃত হয়েছি। আমার আশীর্বাদ রইল ওদের সকলের জন্য।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নাট্যশিল্পী যতই প্রতিভাবান হোন না কেন, তাঁদের শেষ বয়সে পেনশনের কোনও ব্যবস্থা নেই। সরকারের তরফেও কোনও আর্থিক সাহায্য মেলে না। ফলে বহু শিল্পীরাই সমস্যায় পড়েন। প্রবীণ শিল্পীদের অনেকে বর্তমানে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। পুঁজি-লোকবলও কমে এসেছে। প্রণামীর মতো উদ্যোগে তাঁদের অনেকেই উপকৃত হয়েছেন।’’
সঞ্জিতা জানান, আরও অনেক মানুষ এই পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ইচ্ছে আছে, সকলের সাহায্যে আরও বেশি সংখ্যক প্রবীণ শিল্পীদের কাছে যাতে পৌঁছে যাওয়া যায়।