আত্মজা: সন্তান কোলে দিব্যাংশীর মা (বাঁ দিকে)। ছবি: সুজিত দুয়ারি। অপারেশন চলাকালীন গান গাওয়ার এই ভিডিয়োই ভাইরাল হয়েছে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে
গায়ে হাসপাতালের পোশাক। নাকে অক্সিজেনের নল। চোখেমুখে প্রশান্তি। দু’চার কথা বলছেন মাঝে মধ্যে। সামান্য হাসির রেখাও দেখা যাচ্ছে। এক সময়ে ধরলেন গান। ‘‘আমার পরান যাহা চায়/ তুমি তাই, তুমি তাই গো...।’’ অস্ত্রোপচারের টেবিলে গান গাইছেন তরুণী। ঘিরে আছেন চিকিৎসক-নার্সের দল। হঠাৎই ভেসে এল কান্নার শব্দ। শিশুকন্যার জন্ম দিলেন মা।
দিনটি ছিল ৩ মে, অক্ষয়তৃতীয়া। সকাল তখন ৮টা। গান গাইতে গাইতেই কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন সুস্মিতা দে। প্রথম সন্তানের নাম রেখেছেন দিব্যাংশী। ইতিমধ্যেই ১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এক চিকিৎসকই শেয়ার করেন ভিডিয়োটি। পরে তা দেখেছেন সুস্মিতা ও তাঁর বাড়ির লোকজন।
আড়াই বছর আগে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার হাটথুবার বাসিন্দা সুস্মিতার বিয়ে হয় জয়গাছি শ্রদ্ধানন্দপল্লির বাসিন্দা দেবাশিস দাসের। ৩ মে মছলন্দপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় সুস্মিতাকে। অস্ত্রোপচারের টেবিলে মানসিক চাপ কমাতে সুস্মিতার সঙ্গে গল্প জুড়েছিলেন চিকিৎসক-নার্সরা। এমনটাই তাঁদের দস্তুর। লোকাল অ্যান্যাস্থেশিয়ার মধ্যেই কথা বলতে বলতে সুস্মিতা জানান, তিনি গানের ছাত্রী। ওই বিষয়েই স্নাতক হয়েছেন। একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনান না, বলে ওঠেন চিকিৎসক অরিন্দম মজুমদার। তাঁর হাত তখন ছুরি-কাঁচি চালাতে ব্যস্ত। ডাক্তারবাবুর কথা শুনে সুস্মিতা গান ধরেন, ‘আমার পরান যাহা চায়...।’ মেয়ে হওয়ায় খুশি তিনি। পরে বলেন, ‘‘দিনটার কথা ভুলতে পারব না। কবিগুরুর ১৬১ তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ওই গানটাই মনে হল গাই। আমার মেয়েও তো শুনল। ডাক্তার-নার্সদের কৃতজ্ঞতা জানাই।’’ বড় হলে মেয়েকেও রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখাবেন, জানালেন মা।