—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সামনেই এশিয়া কাপের ফাইনাল। তারপরেই বিশ্বকর্মা পুজো দিয়ে শুরু হয়ে যাচ্ছে উৎসবের মরসুম। এর মধ্যেই আসছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এত কিছু উদযাপনে একটু ধুম-ধাড়াক্কা না হলে চলে! অনেকেই তাই হন্যে হয়ে বাজির খোঁজ শুরু
করেছেন।
কিন্তু দত্তপুকুরের মোচপোলে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পরে খোলাবাজারে বাজি তেমন মিলছে না বলেই দাবি ক্রেতাদের।বারাসতের মহকুমাশাসক সোমা সাউ বলেন, "পুলিশ তল্লাশি করছে। বাজার ও গুদাম ঘরের খোঁজ চলছে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বেআইনি বাজির কারবার করলে।"
এ দিকে, দিন কয়েক আগে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে বাজির খোঁজে বাজার ঘুরে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে বারাসতের বাসিন্দা দিলীপ বিশ্বাসকে। তাঁর কথায়, “পুজোর থেকে বেশি বাজি ফাটাতাম ক্রিকেট খেলায়। এ বারই প্রথম বাজি ফাটাতে পারছি না। পরিবেশবান্ধব বাজিও খুঁজেছিলাম, পাইনি।” বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে আতসবাজির খোঁজ করেও পাননি বারাসতের এক কারখানার মালিক স্বপন মণ্ডল।
তাঁর কথায়, “দোকানে বড় করে বিশ্বকর্মার পুজো করি। তুবড়ি ও রংমশাল পোড়ানো হয়। কিন্তু এ বার আর বাজি পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিকদের মন খারাপ।”
গত মাসে বিস্ফোরণ হয় মোচপোলে। মৃত্যু হয় দশ জনের। আহত হন অনেকে। এই ঘটনার পর নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধারে তৎপরতা বেড়েছে পুলিশের। বারাসত পুলিশ জেলা সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে তিনশো টনের বেশি বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাজি উদ্ধার চলছে অন্যান্য জেলাতেও। পুলিশি তৎপরতায় খোলা বাজারে তো বটেই, লুকিয়ে বাজি বিক্রিরও সাহস দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। অনেকেই মজুত বাজি তালাবন্ধ গুদামে রেখে এলাকা ছেড়েছেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দত্তপুকুরের কারখানাগুলি থেকে বিভিন্ন জেলা ছাড়াও সাতটি রাজ্যে বাজি জোগান দেওয়ার কথা ছিল। এশিয়া কাপ, বিশ্বকর্মা পুজো, গণেশ পুজো, দুর্গা পুজো, দশেরা, কালী পুজো, দীপাবলী, ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য বাজির চাহিদা ছিল তুঙ্গে। বাজি তৈরি করে মজুত করে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। অগস্টের গোড়া থেকে কিছু কিছু বাজি সরবরাহও শুরু হয়েছিল। বাজি নিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেয়। চলতি মাসের শুরু থেকে ট্রাক-ট্রাক বাজি সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা। সব হিসেব পাল্টে দিয়েছে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ।
বারাসতের বিভিন্ন বাজার-সহ দত্তপুকুরের নারায়ণপুর, মোচপোল, বেরুনানপুকুরিয়া, নীলগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে দোকানে-দোকানে মিলত বাজি। বিস্ফোরণের পরে সে সবও বন্ধ। এক খুচরো বিক্রেতার কথায়, “এ বার সব বন্ধ। বাজি তুলতে পারিনি। প্রচুর মানুষ এসে বাজির খোঁজ করছেন। কাউকেই দিতে পারছি না।”
স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মানুষজনের বক্তব্য, পুলিশ-প্রশাসনের এমন নজরদারি সারা বছর চললে পরিস্থিতি শুধরাবে। তবে দুর্গা পুজো, কালী পুজোর আগে পুলিশের নজরদারি এমন থাকবে তো, উঠছে সে প্রশ্নও। কালীপুজোর রমরমা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে। প্রচুর বাজিও ফাটে। লক্ষ্মীপুজোয় জেলার নানা জায়গায়, বিশেষত হাবড়ায় প্রচুর বাজি ফাটে। সে সবের উপরে আখেরে কতটা নিয়ন্ত্রণ আসবে, সেটাই এখন দেখার।