হাতে হাতে ঘুরছে প্লাস্টিক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
ডেঙ্গি প্রতিরোধ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য বনগাঁ শহরে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পুরসভা। লাগাতার প্রচারে বাজার-হাট, দোকানে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হয়েছিল অনেকটাই। কিন্তু গত কয়েক মাসে করোনা পরিস্থিতিতে পুরসভার নজরদারি কমে যাওয়ার সুযোগে ফের প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য ইতিমধ্যেই মাইকে প্রচার করে মানুষকে প্লাস্টিকের ব্যবহার না করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। বাজার, দোকানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিয়ে ধরা পড়লে আর্থিক জরিমানা করা হবে বলে প্রচার করা হচ্ছে। ক্রেতার ক্ষেত্রে ধরা পড়লে ৫০ টাকা এবং বিক্রেতার ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে। বনগাঁর পুর-প্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, “আপাতত কয়েক দিন প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হচ্ছে। কাজ না হলে পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ধরপাকড় শুরু হবে।”
২০১৭ সালে পুর এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ে। মৃত্যুও হয় কয়েকজনের। দেখা যায়, এলাকায় মশার দৌরাত্ম্য বাড়ার পিছনে প্লাস্টিকের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। নালা-নর্দমায় প্লাস্টিক পড়ে জমা জলের সমস্যা বাড়ছে। তাতে ডিম পাড়ছে মশা। তারপর থেকে পুরসভা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেয়। পুরসভার কড়া পদক্ষেপের ফলে বাজার, হাটে, দোকানে প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তবে লকডাউনের সময় থেকে সেই ছবি বদলে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। করোনা পরিস্থিতিতে নজরদারি না থাকার সুযোগেই ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার শুরু করেছেন। সাধারণ মানুষের একাংশও সচেতন নন। এই পরিস্থিতি ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কাও করছেন তাঁরা।
সম্প্রতি বনগাঁ শহরে এক মিষ্টির দোকানে গিয়ে চোখে পড়ল, প্লাস্টিকের ক্যারিবাগের মধ্যেই রসগোল্লা ভরে বেরোচ্ছেন এক যুবক। দেখা গেল শহরের মিষ্টির দোকান, মুদির দোকান, খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁয় দেদার প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার হচ্ছে। স্থানীয় ট বাজার, নিউ মার্কেট, কালীবাড়ি বাজার, নেতাজি মার্কেট, রেলবাজার, চাঁপাবেড়িয়া বাজার ঘুরে দেখা গেল বিক্রেতারা কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন। বনগাঁয় মাছের বাজারে এক মাছ বিক্রেতা গোপনে এক ক্রেতাকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে মাছ দিচ্ছিলেন। জানতে চাইলে বললেন, “প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের বদলে আমরা যে ব্যাগ ব্যবহার করছি তার একটির দাম এক টাকা। ব্যাগগুলো পাতলা। ক্রেতাদের কম করে দু’টো করে ব্যাগ দিতে হচ্ছে। ক্রেতারা ব্যাগের বাড়তি দাম দিতে চান না। ফলে লাভ অনেক কমে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে মাঝে মধ্যে গোপনে প্লাস্টিকের ব্যাগ দিতে হচ্ছে।” শহরের একটি চায়ের দোকানে বসে সন্ধ্যায় প্লাস্টিকের কাপে গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে খোশগল্প করছিলেন দুই বয়স্ক ব্যক্তি। প্লাস্টিকের কাপে গরম চা খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর জানেন কি? জিজ্ঞাসা করতেই আকাশ থেকে পড়লেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, “বহু দিন ধরেই তো খেয়ে আসছি। কিছু তো বুঝতে পারিনি।”
বিশেষজ্ঞেরা অব্শ্য প্লাস্টিকের কাপে গরম চা খাওয়া উচিত নয় বলে বারবার সতর্ক করছেন। প্লাস্টিকের কাপ থেকে মুখে ও লিভারে ক্যানসার ছড়ানোর কথা জানিয়েছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব মেডিসিন-এর গবেষকেরা। তাঁদের মতে, এই ধরনের কাপ তৈরি হয় মূলত মাইক্রোপ্লাস্টিক দিয়ে। এতে থাকা টক্সিক পদার্থ বিসফেনল ক্যানসারের অন্যতম কারণ। পরিবেশ কর্মীরা মনে করছেন, সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে প্লাস্টিকের ব্যবহার একশো শতাংশ বন্ধ করা সম্ভব নয়। পুর প্রশাসকের কথায়, “এত প্রচারের পরেও মানুষের সচেতন না হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক।”