এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
বয়স মাত্র বারো! পুতুল খেলার এই বয়সেই কুলতলির এক নাবালিকা হাসপাতালে আসে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়। নানা শারীরিক জটিলতা দেখে গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে তাকে পাঠানো হয় বারুইপুর হাসপাতালে। সেখানে সন্তানের জন্ম দেয় সে। মাস কয়েক আগের এই ঘটনায় হাসপাতালের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। পুলিশ জানতে পারে, পাড়ারই এক বছর কুড়ির যুবকের সঙ্গে মাসকয়েক আগে বিয়ে হয় নাবালিকার।
রাজ্যের একাধিক জেলায় নাবালিকা প্রসূতির হার কমার বদলে বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকেই। কুলতলির ঘটনাটির কথা তুলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করা চিকিৎসকেরাও মানছেন, ‘কন্যাশ্রী’ বা ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প সত্ত্বেও এই জেলাতেও নাবালিকা প্রসূতির হার কমেনি। তাঁরা জানান, গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে ১৮ বছরের কম বয়সিরা প্রায় প্রতিদিনই সন্তানের জন্ম দিচ্ছে। কম বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় শারীরিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভপাতও হচ্ছে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে।
সূত্রের খবর, কুলতলির ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে গত আর্থিক বছরে ৮৫৪ জন কুড়ি বছরের কম বয়সি কিশোরী মা হয়েছে। যা হাসপাতালে আসা মোট অন্তঃসত্ত্বার ১৮ শতাংশ। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০ বছরের নীচে অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা ২০ শতাংশের আশেপাশে। এদের অনেকেরই বয়স ১৮ বছরের কম। জেলার প্রত্যন্ত ব্লকগুলিতে সর্বত্রই পরিস্থিতি প্রায় একই বলেই দাবি চিকিৎসকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে সরকারি পরিসংখ্যানই চমকে দেওয়ার মতো। এর বাইরে একটা অংশ স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা করাচ্ছে। সেই হিসেব সব সময় সামনে আসছে না।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এর পিছনে দায়ী অসচেতনতাই। নানা কর্মসূচি, আইনি পদক্ষেপেও নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আটকানো যাচ্ছে না। ইদানীং নাবালক-নাবালিকাদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত যৌন সংসর্গের ঘটনা বেড়েছে। ফলে, পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। ১৫-১৬ বছরের মেয়েরা বিয়ের আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছে। ফলে, তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের। কুলতলিতেই এমনই এক ঘটনা সামনে এসেছে সম্প্রতি। স্কুলে প্রথম হওয়া ওই ছাত্রী বর্তমানে সন্তান প্রসবের অপেক্ষায়।
শারীরিক জটিলতা এড়াতে ২০ বছর বয়সের আগে মেয়েদের মা হওয়া উচিত নয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, নাবালিকা বিয়ের আয়োজনের খবর এলেই পদক্ষেপ করা হয়। সচেতনতার প্রচারেও নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। কমবয়সি দম্পতিদের নিয়ে বৈঠক, কাউন্সেলিং হচ্ছে। গর্ভনিরোধক নানা উপায় সম্পর্কে জানানো হচ্ছে তাদের। কিন্তু ফল মিলছে কম ক্ষেত্রেই।
জেলার এক গ্রামীণ হাসপাতালে কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসা কর্মীর কথায়, “কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তো আছেই। বিয়ের পর দ্রুত সন্তানের জন্ম দিতে হবে, এমন প্রবণতাও কাজ করে। বাড়ির মা-কাকিমারাই চাপ দেন। ইদানীং অনেক কমবয়সি ছেলে, এমনকি নাবালকদেরও বিয়ে হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন শারীরিক জটিলতার কথা বা গর্ভনিরোধকের গুরুত্ব
এই বয়সের ছেলেমেয়েরা বুঝতে চায় না।”