পুলিশ মর্গ
৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেম্বারে দেহ রাখার কথা মর্গে। কিন্তু বছরখানেক ধরে মহকুমার ১১টি থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ৪১টি দেহ রয়েছে মর্গে। সে সব দেহে পচন ধরে পরিস্থিতি ভয়াবহ। আশপাশের এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
বসিরহাট জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গের এই অবস্থায় রোগীর বাড়ির আত্মীয়েরা তো বটেই স্থানীয় মানুষজনও তিতিবিরক্ত। তাঁদের মতে, বেওয়ারিশ লাশ সৎকারে উদ্যোগী নয় প্রশাসন। অথচ, মাঝে মধ্যে হাসপাতালে চুন-ব্লিচিং ছড়িয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট বদরতলায় জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গত দু’বছর ধরে হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ মর্গটিও প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও চলছে এই পরিস্থিতি। মর্গের আশপাশ দিয়ে যাতায়াতের সময়ে মুখে রুমা না চেপে ধরলে মুশকিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, একাধিক বার মর্গের ভিতরে অতিরিক্ত দেহ থাকার বিষয়টি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। কিন্তু নানা টালবাহানার পাশাপাশি আইনি জটিলতা কাটিয়ে দেহগুলির সদগতি করা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি পুরপ্রধানকে জানানো হয়েছে, পড়ে থাকা লাশ পোড়ানোর জন্য যেন বৈদ্যুতিক চুল্লি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। তবে সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি।
এক ডোমের কথায়, ‘‘দুর্গন্ধে মর্গে ঢুকে কাজ করাটাই রীতিমতো কষ্টকর। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে মর্গের পাশে বাস করাটাও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ চিকিৎসকদেরও অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের ময়নাতদন্তের কাজ করতে খুবই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কমল দাস, রত্না দাস, কমলিকা মণ্ডল, পরান মণ্ডলরা বলেন, ‘‘মর্গ থেকে পচা জল গিয়ে মেশে পাশের খালে। এতে দূষণ ছড়াচ্ছে। পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আবর্জনার জন্য মশা-মাছির উপদ্রবও বাড়ছে।’’
বসিরহাট জেলা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদারের কথায়, ‘‘মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পরিচয়হীন লাশের সদগতির জন্য মহকুমাশাসকের প্রচেষ্টায় সম্প্রতি আইনি জটিলতা কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী দু’চার দিনের মধ্যে পুলিশ মর্গে এক বছর ধরে পড়ে থাকা ৪২টি লাশ সৎকার করা সম্ভব হবে।’’