উৎসবের আলো ঢাকল মৃত্যুর ছায়ায়

নবমীর রাতে স্থায়ী পুজো মণ্ডপের পাশেই ক্লাব ঘরে বসে বাজি বানাচ্ছিলেন প্রভাত, পলাশ, প্রদ্যুৎ ও প্রলয়রা। সকলেই আত্মীয়। প্রভাত ও পলাশ দাদা-ভাই। 

Advertisement

দিলীপ নস্কর

রামনগর শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪১
Share:

বিধ্বস্ত: এই ক্লাবঘরেই বসে বাজি বানাচ্ছিলেন প্রভাত-পলাশরা (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

বিড়ি-সিগারেটটুকুও খেতেন না কেউ। ফলে কী করে বাজি বানাতে গিয়ে এমন বিস্ফোরণ ঘটল, তা ভেবে পাচ্ছেন না আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শিরা।

Advertisement

নবমীর রাতে স্থায়ী পুজো মণ্ডপের পাশেই ক্লাব ঘরে বসে বাজি বানাচ্ছিলেন প্রভাত, পলাশ, প্রদ্যুৎ ও প্রলয়রা। সকলেই আত্মীয়। প্রভাত ও পলাশ দাদা-ভাই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাত তখন প্রায় ১টা। কিছুক্ষণ আগেই পুজো উপলক্ষে জলসা শেষ হয়েছে। গ্রামের লোক তখনও সকলে বাড়ির পথ ধরেননি। আড্ডা চলছে জায়গায় জায়গায়।

Advertisement

এরই মধ্যে হঠাৎ ক্লাবঘর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ। সঙ্গে আগুনের ঝলক। আর্তনাদ। সকলে ছুটে যান। কিন্তু ঢুকতে পারেননি ভিতরে। কারণ পরের পাঁচ মিনিট দফায় দফায় বেশ কয়েক বার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

দাউ দাউ করে তখন জ্বলছে ক্লাব। বাসিন্দারা বালতি বালতি জল, বালি ঢেলে আগুন আয়ত্তে আনেন। জখম চার জনকে জতুগৃহ থেকে উদ্ধার করে আনা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় এমআর বাঙুরে। সেখানেই মারা যান প্রভাত-পলাশ। বাকি দু’জন এখনও চিকিৎসাধীন।

প্রভাত উস্তিতে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির কর্মী। বছর দু’য়েক হল বিয়ে করেছিলেন। এক বছরের ছেলে আছে। বুধবার রামনগর থানার খোর্দ গ্রামে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, স্ত্রী মালবিকা নাগাড়ে কেঁদে চলেছেন। বাবা লালমোহন ছোটখাট চাষি। ভেঙে পড়েছেন তিনিও। পড়শিরা জানালেন, পলাশ কাজ করতেন বেকারি কারখানায়। প্রভাত বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায় কাজ পাওয়ার পরে সংসারের হাল ফিরেছিল।

গ্রামের লোকজন জানালেন, নবমীর রাতে দুর্ঘটনার পরে সকলেই শোকগ্রস্ত। মঙ্গলবার সকালে বিসর্জন হয়েছে প্রতিমার। দেবী চলে যাওয়ার বেদনা যত না বেজেছে প্রাণে, গ্রামের তরতাজা দুই যুবকের মৃত্যুতে সকলেই হতবাক। মঙ্গল ও বুধবার কার্যত রান্নাবান্না হয়নি গ্রামের কোনও বাড়িতে।

উৎসবের পরিবেশটা এক লহমায় বদলে গিয়েছে বিষাদের আবহে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement