দাতা: ব্যারাকপুর পুলিশ ট্রেনিং কলেজের রক্তদান শিবির। শুক্রবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। তার ফলে কোপ পড়ছে রক্তদান শিবিরেও। আগামী এক মাস যদি এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে, তা হলে হাহাকার শুরু হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে এলেন পুলিশকর্মীরা। শুক্রবার ব্যারাকপুর পুলিশ ট্রেনিং কলেজের প্রায় ৫০০ প্রশিক্ষণপ্রার্থী রক্ত দান করলেন।
মোট দু’টি ব্লাড ব্যাঙ্ক এ দিন রক্ত সংগ্রহ করে। কিন্তু জমায়েতে যেখানে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, সেখানে এত পুলিশকর্মী একসঙ্গে রক্ত দিলেন কী করে, সেই প্রশ্ন উঠছে। ব্যারাকপুর পুলিশ ট্রেনিং কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, একসঙ্গে রক্ত দান করেননি পুলিশকর্মীরা।
ছোট ছোট দলে ভাগ করে শিবির হয়েছে। পুলিশকর্মীরা মাস্ক পরেই রক্তদান করেছেন। অন্য প্রয়োজন কমলেও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের রক্ত অবশ্য প্রয়োজনীয়। শিবির না হলে তাঁরা বিপদে পড়বেন। সেই কারণে এমন মানবিক সিদ্ধান্ত তাঁরা নিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন পুলিশকর্তারা। সব রকম নিয়ম মেনে আগামী দিনেও তাঁরা এমন শিবির করতে চান।
পুলিশ প্রশিক্ষণ কলেজের এক কর্তা জানান, তাঁদের কলেজে এই মুহূর্তে দেড় হাজারের বেশি প্রার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
করোনা-ত্রাসে আপাতত কলেজের হস্টেলে বন্দি তাঁরা। ক্লাস থেকে শুরু করে রোজকার শারীরিক কসরত, সবই বন্ধ। ওই কর্তার কথায়, ‘‘সব প্রশিক্ষণ প্রার্থীই এক রকম আইসোলেশনে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ অসুস্থও নেই। এই মুহূর্তে তাঁদের কোনও কাজও নেই। আমরা বাড়িও যেতে দিইনি তাঁদের। সেই জন্যই আমরা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্যই রক্তদান শিবিরের কথা ভাবি। প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের আমরা বলেছিলাম যাঁরা স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে চান, করতে পারেন।’’
এ দিন সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্ত সংগ্রহ করে। সব মিলিয়ে ৪৬৪ জন রক্তদান করেন। রক্তদাতারা মাস্ক পরেছিলেন। শারীরিক পরীক্ষার পরেই তাঁদের রক্তদানের অনুমতি দেওয়া হয়। একটা সময় শিবিরে রক্তদাতাদের ভিড় বেড়ে গিয়েছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং আয়োজকেরা ভিড় সরিয়ে দেন। একসঙ্গে একটি শিবির থেকে এত বেশি ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হওয়ায় খুশি দুই ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
রক্তদানের সঙ্গে জড়িত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ দিন রক্তদাতাদের মাস্ক বিলি করে। সংস্থার কর্তা বিকাশ জয়সওয়াল বলেন, ‘‘আমরা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করি। আমরা পুলিশ কর্তাদের বলেছিলাম এমন একটা শিবির করতে পারলে থ্যালাসেমিয়া রোগীরা উপকৃত হবেন। তাঁরা যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তা সমাজের কাছে উদাহরণ।’’