বড়দিনে সকাল থেকে পর্যটকদের এমনই ভিড় দেখা গিয়েছে সুন্দরবনের একাধিক জায়গায়। নিজস্ব চিত্র।
একের পর এক লঞ্চ আসেছে। ভুটিভুটির সংখ্যাও কম নয়। অনুমতি দিতে নাভিশ্বাস উঠছে কর্মীদের।
সান্তা ক্লজ় এর চেয়ে ভাল আর কী-ই বা উপহার দিতে পারত সুন্দরবনকে।
বাঘের থাবায় প্রাণহানি প্রায়ই ঘটে সুন্দরবনে। কিন্তু করোনা যে এ ভাবে ডাল-ভাতে থাবা বসাবে তা আঁচ করতে পারেননি পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সুন্দরবনবাসী। পর্যটক নেই। তাই রোজগারও নেই। এ ভাবেই কেটেছে কয়েক মাস। নোনাজলে তলিয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের অর্থনীতি। সুন্দরবনবাসীরা তাই সান্তাক্লজের কাছে বোধহয় মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন, ‘ফিরিয়ে দাও পর্যটক’। সান্তা কথা শুনেছে। শুক্রবার, বড়দিনে পর্যটকদের ঢল নেমেছে সুন্দরবনে। করোনা-ভীতি রয়েছে এখনও। তবু কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করেই ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি বেরিয়ে পড়েছেন ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আর সুন্দরবনের অফুরান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে।
কত পর্যটক এসেছিলেন এ দিন? কাছাকাছিও হিসেব দিতে পারলেন না বন দফতরের আধিকারিকেরা। তবু কিছু পরিসংখ্যানে মিলল আভাস। সুন্দরবন ট্যুরিস্ট ভটভুটি সার্ভিস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সঞ্জিৎ দেবনাথ বলেন, “সুন্দরবনের বুকে প্রায় ৫০টি লঞ্চ ও সাড়ে তিনশো ভুটভুটি চলে। আজকের দিনে প্রায় সবগুলিই পর্যটকদের নিয়ে ভ্রমণে বেড়িয়েছে।” বন দফতর সূত্রের খবর, সূর্য ডোবার অনেকে আগেই প্রায় চার হাজার অনুমতি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। সংখ্যাও আরও বাড়বে। যে হোটেল, লজ এতদিন প্রায় মাছি তাড়াচ্ছিল সেখানেই এ দিন ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই রব। এ দিন সকাল থেকেই ক্যানিং স্টেশনে নেমেছেন বহু পর্যটক। সেখান থেকে গাড়িতে চেপে সোনাখালি অথবা গদখালি ঘাটে পৌঁছন পর্যটকরা। কেউ কেউ আবার সরাসরি কলকাতা থেকে গাড়িতে করে সোনাখালি ও গদখালি পৌঁছেছেন। তারপর সেখান থেকে ভুটভুটি বা লঞ্চে চেপে সুন্দরবন ভ্রমণ। আসানসোল থেকে বেড়াতে আসা সুবীর বসু বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে অনেকদিন কোথাও বেড়াতে যেতে পারিনি। বড়দিনের ছুটিতে তাই সুন্দরবনে চলে এলাম। সুন্দরবন অনেক বেশি সেফ, এবং আমরা নিজেরাই নিজেদের মতো লঞ্চে ঘুরতে পারব। সাথে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারব।’’ একই বক্তব্য দমদম থেকে আসা রিমি মল্লিক, সুজাতা দাসদের।
পর্যটন ব্যবসায়ী সূত্রের খবর, এ দিন সুন্দরবনের ক্যানিং, সোনাখালি, গদখালি, ঝড়খালি এলাকা থেকে অন্তত হাজার দশেক পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমনে এসেছেন। এঁদের মধ্যে কিছু পর্যটক এ দিনই ঝড়খালিতে ঘুরে ফিরে গিয়েছেন। অনেকে কয়েক দিনের জন্য এসেছেন। কিন্তু সকালের দিকে ভিড় থাকায় অনুমতি সংগ্রহ করেছেন সন্ধ্যায়।
কেন এ বার এত ভিড়? করোনা পরিস্থিতিতেও নদীবেষ্টিত সুন্দরবন অনেক নিরাপদ ছিল, তাই এবার সুন্দরবন ভ্রমণকেই বেশিরভাগ মানুষ প্রাধান্য দিয়েছেন বলে দাবি পর্যটন ব্যবসায়ীদের। পর্যটন ব্যবসায়ী নিউটন সরকার বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে বন দফতরের সমস্ত নির্দেশিকা মেনে আমরা ট্যুর করছি। সমস্ত লঞ্চ, ভুটভুটি, হোটেলের ঘর জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। বেড়াতে এসে কোনভাবেই যাতে পর্যটকদের অসুবিধায় পড়তে না হয় সেদিকে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে।” সুন্দরবন পিপল ওয়াটার সোসাইটির সম্পাদক উপানন্দ বৈদ্য বলেন, “আমাদের সমস্ত লঞ্চ, ভুটভুটি, হোটেল বুকিং হয়েছে। বহু পর্যটক বুকিং না পেয়ে সুন্দরবনে আসতে পারেননি। দীর্ঘসময় পর বড়দিনের হাত ধরে সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায় ফের জোয়ার এসেছে।”