—ফাইল চিত্র।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই পর্যটক আসা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে সুন্দরবন এলাকায়। গত বছরের লকডাউন-পর্বের মতো এ বছরও আঁধার নেমেছে সেখানকার পর্যটন ব্যবসায়। পর্যটকেরা সুন্দরবনে ঘুরতে যান যে লঞ্চ বা নৌকা করে, সেই লঞ্চ এবং নৌকা মালিকদেরও আয় বন্ধ। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন নৌকায় কাজ করা কয়েক হাজার মানুষ।
উপরের ছবিটা হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের হেমনগর থানা এলাকার। ওই থানার কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকায় ১২টি গেস্ট হাউস এবং হোম-স্টে রয়েছে। এ ছাড়া গোবিন্দকাটি, যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েত এলাকাতেও রয়েছে কয়েকটি গেস্ট হাউস। প্রায় সকলেরই আর্থিক অবস্থা খারাপ। গেস্ট হাউসের মালিকেরা বুঝতে পারছেন না, এমন চলতে থাকলে কী ভাবে তাঁরা এই ধাক্কা সামলাবেন। কর্মীদের বেতনই বা দেবেন কী ভাবে।
গোবিন্দকাটি এলাকার একটি ইকো-টুরিজম কেন্দ্রের মালিক পার্থ দাস জানালেন, ভোটের সময় থেকে কোনও পর্যটক আসছেন না। অথচ, এমন সময়ে অন্য বছর প্রায় অর্ধেক ঘর ভর্তি থাকত। আসত অগ্রিম বুকিংও। এ বার সে সব স্তব্ধ। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে কর্মীদের বেতন দেওয়া যাবে কী ভাবে, সেটাই ভেবে পাচ্ছে না মালিকপক্ষ। কালীতলা বাজারের একটি গেস্ট হাউসের মালিক কুন্তল মণ্ডল জানালেন, প্রায় দু’মাস পর্যটকের দেখা নেই। কর্মীদের বেতন দেওয়াই মুশকিল হয়ে উঠেছে। বাধ্য হয়ে তিনি গেস্ট হাউস বন্ধ করে দিয়েছেন। কুন্তলবাবু বলেন, ‘‘গত বছরের লকডাউনের ধাক্কা এখনও পুরো সামলে উঠতে পারিনি। তারই মধ্যে আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এল। আয় তলানিতে এসে ঠেকেছে। আপাতত অর্ধেক বেতন দিচ্ছি কর্মীদের। সেটাও কত দিন দিতে পারব, জানি না।’’
সামসেরনগরের একটি গেস্ট হাউস সূত্রের খবর, কর্মীদের বেতনের জন্য মাসে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। অথচ, গত দু’মাস ধরে আয় কার্যত শূন্য। অন্য বছর এ সময়ে গেস্ট হাউসের অর্ধেক ঘর ভর্তি থাকত। সেখানকার মালিক অজয় পাল বলেন, ‘‘গত বছর লকডাউনের সময়ে কয়েকটি সংগঠন এসেছিল সুন্দরবনের মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। তাঁরা গেস্ট হাউসে থাকায় কিছু আয় হয়েছিল। এ বার অনেক দিন ধরে কেউ আসছেন না। ফলে আয় বন্ধ। গেস্ট হাউস বন্ধ করে দিলেও কর্মীদের মুখের দিকে তাকিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।’’ সকলেই জানাচ্ছেন, পর্যটক এলে স্থানীয় বাজারগুলিতেও বেচাকেনা বাড়ে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দোকানিদেরও মুখ ভার।
হেমনগর থানার কালীতলা খেয়াঘাট থেকে সুন্দরবন যাওয়ার জন্য পর্যটকেরা লঞ্চ বা নৌকায় ওঠেন। খেয়াঘাটে গত দু’মাসে এক জন পর্যটকও আসেননি বলে দাবি স্থানীয়দের। কালীতলা টুরিস্ট বোট ইউনিয়নের সম্পাদক সামাদ গাজি বলেন, “প্রায় ১৫০০ নৌকা চলত পর্যটকদের জন্য। এমন সময়ে কম করে হলেও নৌকা মালিকদের মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা লাভ থাকত। এ বার তো এক পয়সা আয় হচ্ছে না। প্রায় ছ’হাজার কর্মী কাজ করতেন। তাঁরা এখন গ্রামেও কাজ পাচ্ছেন না। অন্য দিকে, সংক্রমণের ভয়ে বাইরেও যেতে পারছেন না।”