ফাইল চিত্র।
গোটা জেলায় চালিয়ে ব্যাট করেও বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের জয়রথ থমকে গিয়েছে বনগাঁ মহকুমায় এসে। উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টি আসনের মধ্যে ২৯টিতে ঘাসফুল ফুটলেও বনগাঁর চারটি আসনই পেয়েছে বিরোধীরা। ফলাফলের বিশ্লেষণে বসে তাই স্থানীয় নেতাদের রেয়াত করছেন না জেলা নেতৃত্ব। যে সব বুথে খারাপ ফল হয়েছে, সেখানকার বুথ সভাপতিদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। দলীয় কোন্দল বরদাস্ত করা হবে না বলেও বার্তা দেওয়া হয়েছে। কোন অঞ্চলে কোন নেতার কী ভূমিকা ছিল ভোটে, সবই এখন আতস কাচের তলায়, জানাচ্ছেন জেলা নেতারা। পঞ্চায়েত স্তরে সরকারি কাজে স্বজনপোষণ কোনও ভাবে বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
বিধানসভা ভোটে বনগাঁ মহকুমায় খারাপ ফল কেন হল, তার বিশ্লেষণে বসেছিলেন জেলা নেতারা। শনিবার মধ্যমগ্রামে জেলা পার্টি অফিসে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এক সময় তৃণমূলের ‘শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত বনগাঁ মহকুমায় দলের ভরাডুবিতে জেলা নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ। যে চারটি আসনে হেরেছে তৃণমূল, সেই বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা এবং গাইঘাটার স্থানীয় নেতৃত্বকে ডাকা হয়েছিল। ছিলেন দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ-সহ নেতারা।
বৈঠক শেষে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘চারটি বিধানসভায় আমাদের হারের কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে, নিজেদের মধ্যে একটু কোন্দল ছিল। একে অন্যকে হারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ছিল। তা ছাড়া, যে পরিশ্রম আমাদের করা উচিত ছিল, তা আমরা করতে পারিনি। স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল কিছু ক্ষেত্রে।’’ যদিও মহকুমা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, লোকসভা ভোটের তুলনায় পরাজয়ের ব্যবধান কমানো গিয়েছে। তাতে অবশ্য সন্তুষ্ট নন দলের জেলা নেতৃত্ব। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে মহকুমার যে সব বুথে দল পিছিয়ে ছিল, সেই সব বুথের দলীয় সভাপতিদের সরিয়ে নতুন সভাপতি শীঘ্রই নিয়োগ করা হবে।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার চারটি বিধানসভার জন্য এদিন আলাদা করে ১১-১২ জনের একটি দলীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দশদিনের মধ্যে মহকুমার প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে দলীয় ‘মনিটরিং কমিটি’ তৈরি করবে। স্থানীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি জেলা নেতৃত্বও ওই কমিটিতে থাকবেন। প্রতি সাতদিন অন্তর তাঁরা বৈঠক করবেন। জেলা সভাপতির কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত স্তরে সরকারি প্রকল্পের কাজে কেউ স্বজনপোষণ করলে তাঁকে বাঁচানো যাবে না। দল থেকে বহিষ্কার করা হবে, তা তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন।’’
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকে মহকুমার নেতা-কর্মীদের স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের সঙ্গে মেলামেশা করা যাবে না। বিষয়টি খুবই ‘দৃষ্টিকটূ।’ এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘বিশ্বজিৎ দলে ফিরতে চাইলে স্বাগত। কিন্তু যতদিন তিনি দলে না আসছেন, তাঁর সঙ্গে মেলামেশা করা যাবে না বলে দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
প্রার্থী ঘোষণার পরেই মহকুমার চারটি আসনে তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। গাইঘাটার প্রার্থী নরোত্তম বিশ্বাসের হয়ে সে ভাবে প্রচারে দেখা যায়নি প্রাক্তন সাংসদ মমতা ঠাকুরকে। প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় দল ছাড়েন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ধ্যানেশনারায়ণ গুহ। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী শ্যামল রায়কে বনগাঁ শহরে প্রচার করতে তেমন ভাবে দেখা যায়নি। তাঁকে প্রার্থিপদ থেকে সরানোর দাবিতে বনগাঁ শহরে দু’দফায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান দলের কিছু নেতা-কর্মী। বাগদার প্রার্থী পরিতোষ সাহাকে পরিবর্তনের দাবিতে মতুয়ারা রাস্তা অবরোধ করেন। বনগাঁ দক্ষিণের প্রার্থী আলোরানি সরকারের হয়ে সকলকে প্রচারে গা ঘামাতে দেখা যায়নি। আর এ সবই হারের কারণ হয়ে উঠেছিল বলে জেলা নেতৃত্ব মনে করছেন।
এদিনের বৈঠক থেকে বাদুড়িয়ার শায়েস্তানগর ১ পঞ্চায়েতের সদস্য তথা অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি সেলিম সাহারিয়াকে দলবিরোধী কাজের জন্য ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়।