বাগদার বয়রা গ্রামে বিশ্বজিৎ দাস৷ —নিজস্ব চিত্র।
উৎসবের আবহে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃতীয়ার দিন থেকে দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় শুরু হল বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ কর্মসূচি। উদ্দেশ্য, লোকসভা ভোটের আগে বেশি করে জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া।
মঙ্গলবার, তৃতীয়ার সকালে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বাগদা ব্লকের বয়রা পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ শুরু করেন। সঙ্গে ছিলেন বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পরিতোষ সাহা, বয়রা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অসিত মণ্ডল সহ স্থানীয় নেতৃত্ব। বিশ্বজিৎ কুলনন্দপুর, সলক এবং মেহেরানি গ্রামে বাড়ি বাড়ি যান।
মূলত, গ্রামের যে সব মানুষ একশো দিনের কাজ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত, দীর্ঘ দিন টাকা পাচ্ছেন না, নতুন করে প্রকল্পের কাজ পাচ্ছেন না, তাঁদের বাড়ি যাওয়া হচ্ছে। যে সব গরিব মানুষ এখনও কাঁচা বাড়িতে থাকেন, সরকারি আবাস যোজনার পাকা বাড়ি পাওয়ার তালিকায় নাম আছে, অথচ টাকা পাননি— এঁদের বাড়িতেও যাওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, মতুয়া নমঃশূদ্র উদ্বাস্তু, যাঁরা নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় রয়েছেন— তাঁদের বাড়ি তৃণমূল নেতৃত্ব বেশি করে যাচ্ছেন। বনগাঁ লোকসভা এলাকায় অনেক মানুষ একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেও টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ। অনেক গরিব মানুষ আবাস যোজনার পাকাবাড়ি না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, লোকসভা ভোটে আগে ওই সব মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব নিজেদের পালে হাওয়া টানতে আসরে নেমে পড়লেন বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে।
বিশ্বজিৎকে হাতের কাছে পেয়ে বাসিন্দারা এ দিন ক্ষোভ জানিয়েছেন। এক বাসিন্দা বলেন, "একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কাজ করেছি অনেক দিন আগে। সেই টাকা পাইনি। আদৌ পাব কি না, জানি না। নতুন করে কাজ পাচ্ছি না। খেতমজুরি, দিনমজুরি করার পাশাপাশি একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কাজ করতাম। আয় অনেক কমে গিয়েছে। পুজোয় নতুন জামাকাপড় পর্যন্ত কিনতে পারিনি।" এক বৃদ্ধার কথায়, "আবাস যোজনার তালিকায় নাম উঠেছে শুনছি। কিন্তু আজও পাকাবাড়ি পেলাম না। বৃষ্টি হলেই ঘরদোর জলে ভেসে যাচ্ছে।" বিশ্বজিতের কাছে মানুষজন আবেদন করেন, একশো দিনের প্রকল্পে টাকা এবং পাকাবাড়ি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা এবং আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখেছে অন্যায় ভাবে।’’ আশ্বাস দিয়ে আরও বলেন, "আমরা ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্র টাকা না দিলে রাজ্য সরকারই আপনাদের বকেয়া টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। আবাস যোজনার পাকাবাড়ি তৈরি করতে রাজ্য সরকার ৪০ শতাংশ টাকা দেয়। কেন্দ্র টাকা না দিলে রাজ্য সরকারই বাড়ি তৈরি করে দেবে।"
বনগাঁ লোকসভা এলাকাটি মতুয়া উদ্বাস্তু অধ্যুষিত। গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। উদ্বাস্তু ও মতুয়ারা বিজেপিকে বিশ্বাস করে ভোটে জিতিয়ে ছিলেন।
২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন বা সিএএ তৈরি হলেও এখনও তা চালু না হওয়ায় উদ্বাস্তু মানুষের একাংশ ক্ষুব্ধ ও হতাশ। বিশ্বজিৎ এ দিন উদ্বাস্তু এবং মতুয়াদের বলেন, "আপনারা ভোট দেন। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড আছে। আপনারা ইতিমধ্যেই নাগরিক। এ কথা মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলে দিয়েছেন। কেউ আপনাদের এ দেশ থেকে তাড়াতে পারবে না। বিজেপি নাগরিকত্ব নিয়ে আপনাদের ভাঁওতা দিয়েছে।"
গত লোকসভা ভোটে বনগাঁ আসনে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। পরে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন। বিধানসভা ভোটে বিজেপি বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬টিতে জয়ী হয়েছিল। এ বার লোকসভা ভোটে ঘুরে দাঁড়াতে তৃণমূল নেতৃত্ব মরিয়া। পুজোর মরসুমেও বিশ্রাম নেই। বিশ্বজিৎ বলেন, "পঞ্চমী পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ কর্মসূচি চলবে। তারপরে আবার দমশীর পর থেকে জোরকদমে শুরু হবে।"
তৃণমূলের এই কর্মসূচিতে অবশ্য কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, "একশো দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা এবং আবাস যোজনার টাকা তৃণমূল নেতারা চুরি করেছেন। সেই অপরাধ ঢাকতে, মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে নতুন নাটক শুরু করেছে।"