বাম আমলে নিয়োগ-পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। — ফাইল চিত্র।
নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। পাল্টা, বাম আমলে নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে সরব তৃণমূল। বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে বাম আমলে নিয়োগ-পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
২০০০ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর মজিলপুর পুরসভায় বেশ কিছু নিয়োগ নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তোলেন কুণাল। সে সময়ে একটি সরকারি নির্দেশিকার প্রতিলিপি সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন কুণাল (তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)। সেখানে জয়নগর-মজিলপুর পুরসভায় বিভিন্ন পদে ৩০ জনের চাকরির নির্দেশ রয়েছে। এই চাকরি আদৌ স্বচ্ছ ভাবে হয়েছিল কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল মুখপাত্র। কুণাল লিখেছেন, “নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে যোগ্যতমদের নিয়োগ হয়েছিল কি?পরীক্ষা, ইন্টারভিউতে সাধারণ সব কর্মপ্রার্থী সুযোগ পেয়েছিলেন অংশ নেওয়ার?”
সে সময়ে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা বামেদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কুণাল। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ীর বক্তব্য, “আপাদমস্তক দুর্নীতিপরায়ণ এক জন জেলখাটা মানুষ কী অভিযোগ করছেন, তাতে মানুষের কিছু এসে যায় না! তবে অভিযোগ করার আগে তো জানতে হবে, তার কোনও যৌক্তিকতা আছে কি না! অভিযোগ করা হয়েছে, এক নির্দেশেই গুচ্ছ নিয়োগ। বেনিয়ম হয়েছিল কি না, তার কোনও তথ্য আছে?” তাঁর সংযোজন, ‘‘সে সময়ে জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার দায়িত্বে আমরা ছিলাম না। বামফ্রন্ট জমানার বেশির ভাগ সময়ে ওই পুরসভা ছিল কংগ্রেসের হাতে। নিয়োগে কী হয়েছিল, পুরসভার দায়িত্বেযাঁরা ছিলেন, তাঁরাই ভাল বলতে পারবেন।”
জয়নগরের সিপিএম নেতা পুলক বসু আবার বলেন, “রাজ্য সরকার তো পঞ্চায়েত-পুরসভাগুলিকে ক্ষমতা দিয়ে রেখেছিল সে সময়ে। কংগ্রেসের প্রশান্ত সরখেল ছিলেন পুরপ্রধান। তাঁর সুপারিশেই চাকরি হয়েছিল। আমরা সে সময়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। তৎকালীন পুরপ্রধানকে তো আজকাল কুণালবাবুদের দলের নেতাদের সঙ্গেই দেখা যায়। কুণালবাবু তাঁর কাছ থেকেই তো বিষয়টা জেনে নিতে পারতেন।”
নিয়োগে অস্বচ্ছতার কথা মানতে চাননি তৎকালীন পুরপ্রধান প্রশান্ত সরখেল। তিনি বলেন, “যাঁদের নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা পুরসভার অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। আদালতের রায়ে এবং সরকারি নির্দেশে তাঁদের স্থায়ী করা হয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন।” তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও মানতে চাননি তিনি। প্রশান্তের কথায়, “আমি কংগ্রেসেই আছি।”
কুণাল অবশ্য বামেদের দিক থেকে অভিযোগের আঙুল সরাতে নারাজ। তাঁর দাবি, “সে সময়ে পুরসভায় যে-ই থাকুক না কেন, রাজ্যে সরকার তো বামফ্রন্টের ছিল। সরকারি অনুমোদন নিয়েই তো যাবতীয় দুর্নীতি হত সে সময়ে। আর চিঠির তলায় তো রাজ্য সরকারের যুগ্ম সচিবের স্বাক্ষর রয়েছে।”
কুণাল ঘোষের পোস্ট করা নির্দেশিকায় চাকরি প্রাপকদের তালিকায় নাম রয়েছে পুরসভার বর্তমান হেড ক্লার্ক জয়দেব দাসের। জয়দেব বলেন, “১৯৯০ সালে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। পরে সরকার অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী করার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশিকা মেনেই আমাদের স্থায়ী করা হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “পরে তো বর্তমান সরকারের আমলে আমাদের পদোন্নতিও হয়েছে। নিয়োগে অস্বচ্ছতা থাকলে সরকার পদোন্নতি কী ভাবে করল?”
তালিকায় নাম থাকা কয়েক জন কর্মীর পাশে বসে বর্তমান পুরপ্রধান, তৃণমূলের সুকুমার হালদার এ দিন বলেন, “কুণাল ঘোষ যে অভিযোগ করেছেন, সে ব্যাপারে তিনিই বলতে পারবেন। আমি সে সময়ে ছিলাম না। পরে কাউন্সিলর হিসেবে আসি। এই সহকর্মীদের সঙ্গে আমি দীর্ঘ দিন কাজ করছি।”