TMC

বাগদার নেতাদের কচকচানি বন্ধ করার নির্দেশ

তৃণমূল নেতৃত্ব ভাল করেই জানেন, বিধানসভায় ভাল ফল করতে হলে দলীয় নেতাদের এক ছাতার তলায় আনতে হবে। সে জন্যই জ্যোতিপ্রিয় পদক্ষেপ করছেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র 

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাগদায় দলীয় কোন্দল মেটাতে এ বার কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দীর্ঘদিন ধরেই এখানে নেতাদের পারস্পরিক সম্পর্ক জেলা তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে বাগদার হেলেঞ্চায় এসেছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূলের কোঅর্ডিনেটর গোপাল শেঠ।

Advertisement

নেতাদের হাতের কাছে পেয়ে জ্যোতিপ্রিয় তাঁদের বলেন, ‘‘আপনারা নিজেদের মধ্যে কচকচানি বন্ধ করুক। সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’’ জ্যোতিপ্রিয়ের এই কথা শুনে তৃণমূলের সাধারণ কর্মী সমর্থকেরা খুশি হয়েছেন। কারণ, জেলা সভাপতি তাঁদের মনের কথাটা প্রকাশ্যে বলেছেন। জ্যোতিপ্রিয় নেতা কর্মীদের বলেন, ‘‘অতীতে একটি সময় জেলায় ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে একমাত্র বাগদা পঞ্চায়েত সমিতিতে আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। সেই জায়গা থেকে কেন আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। কেন বাগদা প্রথম সারিতে আসবে না?’’

একথা ঠিকই যে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অনেক আগেই বাগদায় তৃণমূল শক্তিশালী সংগঠন তৈরি করে ফেলেছিল। বাম আমলেই বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। ২০০৬ সালে বিধানসভা ভোটে রাজ্যে তৃণমূলের ভরাডুবির মধ্যেও বাগদা বিধানসভাকেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দুলাল বর। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে বাগদা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন তৃণমূলের উপেন বিশ্বাস। তারপর অবশ্য কোদালিয়া বেতনা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে উপেন পরাজিত হন। গত বছর লোকসভা ভোটে বাগদা কেন্দ্রে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর। গত পঞ্চায়েত ভোটে ব্লকের দু'টি পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি। এখানে বিজেপি তাদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়ে নিয়েছে অনেকটাই।এখন এখানে তৃণমূলের ক্রমশ পিছিয়ে পড়ার কারণ কী?

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানকার তৃণমূলের নেতারা দলীয় কোন্দলে বিভক্ত। এতগুলো যে গোষ্ঠী-উপগোষ্ঠী আছে, তা নিজেরাও হিসেব করে বলতে পারেন না কর্মীরা।নেতাদের একাংশের স্বচ্ছতার অভাব। বিভিন্ন সময়ে নেতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা। বাগদায় কান পাতলেই শোনা যায়, এক নেতা আরও এক নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, সমালোচনা করছেন। আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই নেতাদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সাতজনের নাম শোনা যাচ্ছে। যাঁরা প্রার্থী হওয়ার দাবিদার। কর্মীদের কথায়, ‘‘নেতারা নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়ুল মারছেন।’’ সম্প্রতি জেলা তৃণমূলের কোঅর্ডিনেটর গোপাল বাগদার বেশি সময় দিচ্ছেন। নেতা কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় তৈরির চেষ্টা করছেন।

তৃণমূল নেতৃত্ব ভাল করেই জানেন, বিধানসভায় ভাল ফল করতে হলে দলীয় নেতাদের এক ছাতার তলায় আনতে হবে। সে জন্যই জ্যোতিপ্রিয় পদক্ষেপ করছেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি জেলার ৩৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে আমাদের সব থেকে বেশি কর্মী সমর্থক আছেন বাগদায়। পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে।’’ স্থানীয় নেতাদের তিনি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, "পুরনো কর্মীদের কাছে গিয়ে হাত ধরে বলুন ভুল করেছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গেই থাকতে হবে। " জ্যোতিপ্রিয় এ দিন মঞ্চে ডেকে নেন হেলেঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান নিখিল ঘোষকে। তাঁকে পাশে নিয়ে তিনি বলেন, " একটা সময় নিখিল অ্যাকটিভ ছিলেন। এখন কেন ইনঅ্যাকটিভ। আমি নেতৃত্বের কাছে জানতে চাইছি। " দলীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হেলেঞ্চাতে একটি দলীয় কার্যালয় করা হচ্ছে। জেলা সভাপতি জানিয়েছেন, তিনি প্রতি মাসে একবার করে আসবেন। সকলের কাজকর্মের দিকে নজর রাখা হবে। দলীয় নেতৃত্বের দাওয়াই কাজে আসে কিনা এখন সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement