কৌশিক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
‘কাটমানি’-র প্রতিবাদ করায় মারধর করা হয়েছিল কৌশিক ভট্টাচার্য নামে সন্দেশখালি ২ বিডিওকে। কিন্তু তাঁকে যারা মারধর করেছিলেন তারা আজও অধরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাটমানি ফেরতের জন্য যতই বলুন না, কাটমানির প্রতিবাদ জানানোয় বিডিওদের মার খাওয়ার ঘটনায় উদ্বিঘ্ন সরকারি আধিকারিকরা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কাটমানির প্রতিবাদ করলেও তাঁর পুলিশ কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’ এখন প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমানে কাটমানি নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল শুরু হলেও কাটমানি বন্ধে সত্যিই কি প্রশাসন উদ্যোগী?
সহকর্মীকে মারধরে ক্ষুব্ধ সরকারি আধিকারিকদের একাংশের দাবি, সত্যিই যদি কাটমানি বন্ধের চেষ্টা থাকে তা হলে কৌশিককে যারা মেরেছে, তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। তা হলে কেউ আর কাটমানি বন্ধ করতে চাওয়া সরকারি আধিকারিকের গায়ে হাত তুলতে সাহস করত না।
চলতি বছরের ৬ জুন কাটমানির প্রতিবাদ করায় স্থানীয় দু’টি পঞ্চায়েতের প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সহ শাসকদলের কয়েকজন বিডিও কৌশিককে মারধর করে বলে অভিযোগ। আহত বিডিও হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উপর আমার আস্থা আছে। তিনি নিশ্চয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।’’ বিডিওর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মারধর, আগ্নেয়াস্ত্র, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা এবং খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক ধারায় ওই তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। তিনজন ঘরা পড়লেও মূল অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। কৌশিকবাবুর বাড়ি রায়গঞ্জে। তিনি এখন সেখানে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার আশা ছিল, প্রধান অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করবে। তেমনটা না হওয়ায় আমরা সকলে হতাশ।’’ এ দিকে সন্দেশখালি ২ বিডিও না থাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বিঘ্ন হচ্ছে।
কিন্তু কেন বিডিওর উপর হামলা হল? ব্লক প্রশাসন সূত্রের দাবি, সন্দেশখালির বিভিন্ন নদী পার হতে গেলে পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষে ফেরিঘাটে এক টাকা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও যাত্রীদের দিতে হয় তিন টাকা। লক্ষ টাকার একটা বড় অংশ কাটমানি হিসাবে দিতে হয় এলাকার নেতাদের। এ ভাবেই রাতারাতি ফুলে ফেঁপে ওঠে এক শ্রেণির নেতা।
২০১৭ সালে সন্দেশখালি ২ ব্লক দফতরে যোগ দিয়ে এর প্রতিবাদ করে মৌচাকে ঢিল মারেন কৌশিক। বাংলার বাড়ি প্রকল্প, একশো দিনের কাজ, নদীর পাশে আধুনিক ফেরিঘাট তৈরি, বসার জায়গা, ত্রাণ শিবির, গাছ, আয়লার চাল, পুকুর কাটা, রাস্তা-সহ একাধিক প্রকল্পে দুর্নীতির পাশাপাশি কাটমানির সঙ্গে যুক্ত কেউ কেউ রাতারাতি কোটিপতি হয়ে ওঠে। তাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন কৌশিক।
কৌশিকের কাজে সন্তুষ্ট জেলা প্রশাসন। তাঁদেরও মনে হয়েছিল যে ভাবে কাটমানি এবং দুর্নীতির প্রতিবাদ শুরু করেছে কৌশিক তাতে যে কোনও মুহূর্তে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন। তাই জেলাশাসকের প্রচেষ্টায় মহকুমার একমাত্র বিডিও হিসাবে তিনি দেহরক্ষীও পান। কিন্তু তাতেও রক্ষা মেলেনি। বিডিওর সঙ্গে মার খেয়েছিলেন ওই দেহরক্ষীও। যা নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন। এই ঘটনার পর কৌশিককে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছিল।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তে শাসকদলের কেউ কেউ খুশি নন। তেমনি অখুশি হয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, ‘‘মানুষের বিপদের সময় কৌশিক পাশে দাঁড়াতেন। রাত বিরেতেও মোটরবাইক নিয়ে মানুষের পাশে পৌঁছে যেতেন কৌশিক। এমন মানুষকে এলাকা থেকে বদলি করা যাবে না।’’ এমন হলে প্রশাসনের কাজ নিয়েই প্রশ্ন উঠবে বলে এলাকাবাসী মনে করেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।