ফাইল চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধক্ষ্যের পদ থেকে পদত্যাগ করে বুধবার জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছিলেন রতন ঘোষ। বুধবার তিনি বনগাঁয় মুখ্যমন্ত্রীর সভাতেও ছিলেন না।
এ বার দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করে মুখ্যমন্ত্রী ও দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে চিঠি দিলেন রতন।
তাঁর দাবি, চিঠি তিনি ইতিমধ্যেই তৃণমূল ভবনে পৌঁছে দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, দলের প্রাথমিক সদস্যপদ এবং দলের সমস্ত পদ থেকে থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, ‘‘দলের হয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দলের কাজ করেছি। আমার অনুরোধ, আমার এই ইস্তাফা দ্রুত গ্রহণ করা হোক।’’
দলের প্রাথমিক সদস্যপদ ও দলের সমস্ত পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয় সরাসরি কোনও মন্তব্য না করে রতন বলেন, ‘‘এখনই অন্য কোনও দলে যোগদান করছি না। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সময় মতো জানিয়ে দেব।’’
এ দিকে তৃণমূলের দলত্যাগী মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর মতো বনগাঁ শহরে রতনের নামে পোস্টার পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে শহরে ত্রিকোণপার্ক, প্রতাপগড়, বাটার মোড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার দেখা গিয়েছে। পোস্টারে রতনের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘‘আমরা দাদার অমুগামী। দাদা তোমার পথই আমাদের পথ।’’ পোস্টারের বিষয়ে রতন বলেন, ‘‘সকালে আমি শুনেছি। যাঁরা আমার অনুগামী পরিচয় দিয়ে পোস্টার দিয়েছেন তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আগামী দিনের আমার রাজনৈতিক লড়াইয়ে আমি ওঁদের নিয়ে চলব।’’
এ দিকে রতন দল থেকে সরে আসার পর দলের একাংশের নেতারা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কেন তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, তা তাঁরা জানতে চাইছেন। রতন অবশ্য তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও কথা বলেননি বলে সূত্রের খবর। রতনের সিদ্ধান্তে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘রতন চলে যেতে চাইলে চলে যান। তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না।’’ দলের অনেকেই অবশ্য বলছেন, ‘‘রতন অন্য দলে গেলে তৃণমূলের ক্ষতি হবে। কারণ তিনি একজন দক্ষ সংগঠক।’’
রতনের দলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘কেউ স্বেচ্ছায় দল ছাড়তে চাইলে কী বলার থাকতে পারে। তবে মদন মিত্রকে দিয়ে রতনের সঙ্গে কথা বলিয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।’’ সূত্রের খবর, রতনের সঙ্গে মদনবাবুর প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে।
এদিকে বিজেপির জন্য রতনের দরজা খোলা আছে জানিয়ে দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুষ্কৃতী ও দাগি অপরাধী ছাড়া সকলের জন্য আমাদের দলের দরজা খোলা আছে। আমরা সকলকে নিয়ে সোনার বাংলা গড়তে চাই।’’
তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই রতন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে। তৃণমূল দল প্রতিষ্ঠার হওয়ার পর যাঁদের হাত ধরে তৃণমূল বনগাঁর শক্তিশালী হয়েছিলেন, তার মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন রতন।
রতনের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু বছর ধরেই দলে তাঁর গুরুত্ব কমছে বলে মনে করেন তিনি। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি হলেও তাঁকে পদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছিল না। কয়েক মাস দলীয় বৈঠকেও তাঁকে ডাকা হচ্ছিল না বলে অভিযোগ।
এ দিকে গাইঘাটার ঠাকুরনগর এলাকায় মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে পোস্টার পড়েছে। পোস্টারে লেখা, ‘‘ছাত্র যুবর নয়নের মনি।’’ নীচে লেখা, পশ্চিমবঙ্গ বন্যপ্রাণী সংরক্ষক লাভার্স সংগঠন।