দফতর থেকে কথা বলে বেরোচ্ছেন নান্নু। ছবি: সামসুল হুদা
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে দালাল-চক্র চলছে বলে অভিযোগ তুললেন তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য নান্নু হোসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি ভাঙড় ২ ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরে গিয়ে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে ‘দালাল চক্র’ নিয়ে সতর্ক করেন।
ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের পর থেকে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ ছিল জমির মিউটেশন, কনভারশন-সহ অন্যান্য কাজ। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওই কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ভাঙড় ২ ব্লকের ভূমি সংস্কার দফতরে গেলে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। স্থানীয় মুহুরিদের মোটা টাকা দিলে সেই কাজ অনেক সহজে হয়ে যায় বলে অভিযোগ।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ভাঙড়ের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমার সামান্য কিছু জমির মিউটেশনের জন্য ওই অফিসে কত দিন ধরে ঘুরতে হয়েছে। শেষে দালাল ধরে কিছু টাকা দিয়ে কাজ বের করতে হল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘শুনতে পাই, যাদের অনেক টাকার কারবার, তাদের কোনও কাজ অফিসে পড়ে থাকে না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের হয়রান হতে হয়।’’
নান্নুও এ সব নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন এ দিন। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ সরাসরি এই দফতরে এসে কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না। এখানে একটি মুহুরি অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলা হয়েছে আমাদেরই দলের কিছু উঠতি নেতার মদতে। শুধু তাই নয়, দফতরের সঙ্গে যোগসাজশ করে কিছু জমি-মাফিয়া সরকারি জলাজমি, নিকাশি খাল ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অবিলম্বে এই সমস্ত বেআইনি কাজ বন্ধ না করা হলে আমরা দলীয় পতাকা নিয়ে গিয়ে ওই সমস্ত কাজ বন্ধ করে দেব।’’
ভাঙড় ২ ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিক শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘উনি কিছু অভিযোগ জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। সেই মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’
দফতরের কাজকর্মে কিছু ক্ষেত্রে স্বচ্ছ্বতার অভাব যে ঘটছে, তা স্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট আরও অনেকে। ভাঙড়ের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ল-ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কামরুল মোল্লা বলেন, ‘‘আমাদের বাদ দিয়ে দফতরের সঙ্গে কিছু দালাল যোগসাজশ করে এ সব করছে। আমরা অনৈতিক ভাবে মানুষের থেকে বাড়তি টাকা আদায় করি না। চেষ্টা করি, মানুষকে সঠিক পরিষেবা দেওয়ার।’’
দফতরের কাজকর্মে অখুশি বিরোধীরাও। বিজেপির ভাঙড় ২ ব্লক মণ্ডল সভাপতি অবনী মণ্ডল বলেন, ‘‘ভাঙড়ের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর দুর্নীতির আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। পয়সা দিলে কোনও নোটিস ছাড়াই একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। আজ শাসকদলের যাঁরা এই অভিযোগ করছেন, তাঁরা সবাই বিষয়টি জানেন।’’ অবনীর অভিযোগ, ‘‘আসলে ওঁদের নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল ও টাকার বখরা নিয়ে গোলমালে এ সব কথা বলছেন। অবিলম্বে এই দুর্নীতি বন্ধ হওয়া উচিত।’’ এ সব অভিযোগ অবশ্য গায়ে মাখছেন না নান্নু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানুষ যাতে সঠিক পরিষেবা পান, সেই ব্যবস্থা করেই ছাড়ব।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদমণ্ডলীর সদস্য তুষার ঘোষও বলেন, ‘‘ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমি ভরাট করে বহুতল বিল্ডিং হচ্ছে। হাতিশালাতেও জলপথ বন্ধ করে বিল্ডিং করা হচ্ছে। অথচ প্রশাসনের এ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। প্রশাসনের এক অংশের সঙ্গে শাসকদলের যোগসাজশে এ সব করা হচ্ছে।’’