কিশোরীর বিয়ে বন্ধ করল তিন সহপাঠী

তিতলি ঘোষ, সাথী ঘোষ, মেঘা পালিতরা পড়ে বনগাঁর সুভাষনগর জীবনস্মৃতি ইনস্টিটিউশনে। সকলেই স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্য।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০২:১৮
Share:

সচেতন: তিন বান্ধবী। নিজস্ব চিত্র

সহপাঠী কয়েক দিন ধরে স্কুলে না আসায় বন্ধুদের মধ্যে কথা হচ্ছিল। বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে জানানো হয়, পারিবারিক সমস্যায় স্কুলে যাচ্ছে না মেয়েটি। ক’দিন পরে যাবে। কিন্তু উত্তর সন্তোষজনক মনে হয়নি তিন বন্ধুর। তারা বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কানে তোলে। তাঁর পরামর্শে নজরও রাখতে থাকে পরিস্থিতির উপরে। শেষমেশ জানতে পারে, বিয়ের ঠিক হয়েছে দশম শ্রেণির সহপাঠীর। শেষমেশ অবশ্য বিয়ে আটকানো গিয়েছে সেই বিয়ে।

Advertisement

দশম শ্রেণির এক সহপাঠীকে স্কুলে আসতে না দেখে তাদের সন্দেহ হয়েছিল। রবিবার তারা জানতে পারে, বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের বন্ধু। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে কাউকে দেখতে পায়নি। পড়শিদের কাছে জানতে পারে, কাছেই মামার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার। ফোন করলে উত্তর দেন মেয়েটির মামি। বলেন, শরীর খারাপ বলে এখানে আছে ক’দিন। দেরি না করে তিতলিরা চাইল্ড লাইনের হেলপ লাইন নম্বর ১০৯৮-এ ফোন করে।

চাইল্ড লাইন থেকে সেই খবর পৌঁছয় বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি মহকুমা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ ও চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিদের বিয়ে বন্ধ করতে পাঠান। আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের প্যারা লিগ্যাল ভলান্টিয়ার তন্ময় হালদার ও চাইল্ড লাইনের এক প্রতিনিধি বিয়েবাড়ি খুঁজতে বেরোন। কিন্তু তাঁরা বাড়ি খুঁজে পাননি। তখন একটি ছোট গাড়ি নিয়ে তন্ময় ড্রাইভার সেজে এলাকায় যান। বাসিন্দাদের কাছে জানতে চান, এখানে কোনও বিয়ে হচ্ছে কিনা। কেউ কিছু জানাতে পারেনি। খোঁজাখুঁজি করতে করতে তন্ময় দেখেন, কয়েকজন মহিলা জল আনতে যাচ্ছেন। গাড়ি রেখে তিনি মহিলাদের পিছু নিয়ে বিয়ে বাড়ি পৌঁছে যান। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ।

Advertisement

ছাত্রীটির পরিবারের লোকজনকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করা হয়। মহকুমা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সম্পাদক অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েটির বয়স মাত্র পনেরো বছর। কলকাতার এক যুবকের সঙ্গে রবিবার বিয়ের কথা ছিল। মেয়েটির পরিবার আমাদের কাছে মুচলেকা দিয়ে বলেছে, মেয়ের আঠারো বছর না হলে তাঁরা বিয়ে দেবেন না।’’ মেয়েটি জানিয়েছে, সে এখন লেখাপড়া করবে।

তিতলি, সাথীরা বলে, ‘‘আমরা জানতাম, আঠারো বছর না হলে কাউকে বিয়ে দেওয়া যায় না। বন্ধুর বিয়েটা বন্ধ করতে পেরে খুবই আনন্দ হচ্ছে।’’

মহকুমাশাসকের কথায়, ‘‘বনগাঁ পুরসভা এলাকায় এখনও নাবালিকা বিয়ে হওয়াটা দুঃখজনক। তবে স্কুলের মেয়েদের কাজে আমরা গর্বিত।’’ মেয়েদের ভূমিকার তারিফ করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক পীযূষ সাহাও। তিনি বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী ক্লাব তৈরি করা হয়েছে মেয়েদের নিয়ে। ওরা নজর রাখে কেউ স্কুলে অনিয়মিত আসছে কিনা, কারও বিয়ে হচ্ছে কিনা। তারই সুফল মিলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement