—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
টাকিতে ইছামতী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে একসময় প্রচুর উৎসাহ ছিল দর্শকদের। কিন্তু দিনে দিনে সেই উৎসাহ কমছে বলেই দাবি পুজো কমিটি ও স্থানীয় মানুষজনের। রবিরার বিসর্জন উপলক্ষে পর্যটকদের ভিড় হলেও তা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম। ইছামতী নদীতে প্রতিমা নিয়ে ঘুরতেও দেখা যায়নি খুব বেশি পুজো কমিটিকে। এলাকার মানুষ জানান, এবার সব মিলিয়ে ৩-৪টি প্রতিমা নদীতে নামে। বেশিরভাগ প্রতিমা রাজবাড়ি ঘাট থেকেই বিসর্জন দেওয়া হয়।
পুলিশ ও বিএসএফের তরফে এ দিন টাকিতে কড়া নিরাপত্তা ছিল। প্রায় ১৫০ পুলিশ কর্মী মোতায়ন করা হয় বলে বসিরহাট জেলা পুলিশের দাবি। মাঝ নদীতে বিগত বছরগুলোর মত এবারও নৌকা দিয়ে একটা নিয়ন্ত্রণ রেখা তৈরি করা হয়েছিল। নদীতে লাগাতার স্পিড বোট নিয়ে নজরদারি চালায় বিএসএফ। নদীর পাড়েও বিএসএফের নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মত। বসিরহাটের পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমানও নদীতে টহল দেন । এ দিন বাংলাদেশের দিকে একটি নৌকাকেও প্রতিমা নিয়ে জলে নামতে দেখা যায়নি। তবে নদীর পাড়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখা যায়। সেই সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় অনেক কম বলেই জানান এলাকার মানুষ। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও তেমন চোখে পড়েনি। তবে ভারতের দিকে বেশ কিছু নৌকা দেখা যায় বিকেলের দিকে যাত্রী নিয়ে নদীতে ঘুরতে।
টাকিতে বিসর্জনে কেন এত কম প্রতিমা নদীতে নামছে? টাকির থুবা ব্যায়াম সমিতির সম্পাদক কমল ঘোষ বলেন, “নৌকায় প্রতিমা তুলতে আমাদের ভাড়া বাবাদ প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। এই অতিরিক্ত খরচ করা সমস্যা।”
কমল জানান, এবার পর্যটকদের ভিড় অনেক কম ছিল। তাই ক্লাব থেকে রাজবাড়ি ঘাট পর্যন্ত যেতে অনেক কম সময় লেগেছে।
টাকি পুরসভার কাউন্সিলার তথা স্থানীয় হোটেল মালিক প্রদ্যোত দাস বলেন, “আমার হোটেলে এবার বেশ কিছু ঘর ফাঁকা ছিল বিসর্জনের দিন। অন্য বছর সব ঘর ভর্তি থাকে। টাকির বিসর্জনের আকর্ষণ তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। তাই ক্রমশ কম মানুষ আসছেন। বিসর্জন আকর্ষণীয় করতে ঘাট গুলোর পরিকাঠামো উন্নত করতে হবে, যাতে নৌকায় সহজে প্রতিমা তোলা যায়। নৌকার ভাড়াও কমানো দরকার।” তিনি আরও বলেন, “টাকির অর্থনীতির স্বার্থে, যে সব পুজো সরকারি অনুদান নিচ্ছে, তাদের প্রতিমা নামাতে অনুরোধ করা দরকার।”
টাকির উপ পুরপ্রধান ফারুক গাজির দাবি, “টাকিতে ভালই ভিড় হয়েছিল। নদীতে ১০-১২ টা প্রতিমা নেমেছিল। তবে বাংলাদেশের দিকে কেউ নদীতে নামেনি। ওরা নামলে আরও ভাল হত। টাকির ঘাটে ভাসমান জেটি তৈরির চেষ্টা করা হবে আগামিদিনে, যাতে নৌকা প্রতিমায় তুলতে সুবিধা হয়।”
টাকি পুর নাগরিক সমিতির সম্পাদক প্রণব সরকার বলেন, “টাকির বিসর্জন আগের চেয়ে জৌলুস, ঐতিহ্য ও কৌলিন্য হারিয়েছে। টাকিতে এবার নদীতে মাত্র ৩-৪টি প্রতিমা নদীতে নামে। তবে কিছু মানুষ নৌকা নিয়ে নদীতে ঘুরেছেন। কিন্তু ভিড় গত বছরের তুলনায় কম।”