Coronavirus

বাড়ছে করোনা পজ়িটিভের সংখ্যা, নেই সচেতনতা

প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়া, অশোকনগর, গোবরডাঙা এলাকায় রবিবার পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্য ৪৯

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাবড়া শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ০৪:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

পরিযায়ী শ্রমিকেরা এলাকায় ফিরছেন। সেই সঙ্গে করোনা পজ়িটিভ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে হাবড়া অশোকনগর, গোবরডাঙা এলাকায়। করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়লেও কিছু মানুষের মধ্যে থেকে সচেতনতা প্রায় উধাও। তাঁরা মাস্ক ছাড়াই বাজার-হাটে বেরোচ্ছেন। হাত ধোয়া, স্যানাটাইজ় তো দূরের কথা।

Advertisement

প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়া, অশোকনগর, গোবরডাঙা এলাকায় রবিবার পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্য ৪৯। আক্রান্তদের বেশির ভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র থেকে ফেরা। স্থানীয় ভাবে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগের কলকাতা যোগ রয়েছে। কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ ব্যবসার কাজে, কেউ চাকরি সূত্রে কলকাতায় যাতায়াত করেন।

অভিযোগ, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরলেও তাঁদের যথেষ্ট লালারস পরীক্ষা করা হচ্ছে না। যাঁদের জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকছে, তাঁদেরই লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে। মানুষের বক্তব্য, এখন উপসর্গ ছাড়াও অনেকে করোনা পজ়িটিভ হচ্ছেন। ফলে সকলের পরীক্ষা না হওয়ায় জানা সম্ভব হচ্ছে না তিনি করোনা পজ়িটিভ কিনা।

Advertisement

অভিযোগ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাঁরা আসছেন, তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক নিভৃতবাসে রাখা হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি ভাবে বা ব্যক্তি উদ্যোগে যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের অনেকেই স্কুল নিভৃতবাসে থাকছেন না। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা গ্রামবাসীর সংস্পর্শেও আসছেন।

হাবড়া ১ ব্লকে করোনা পজ়িটিভ ৮ জন। হাবড়া ২ ব্লকে ২০ জন। হাবড়া পুর এলাকায় ১০ জন। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকায় ৯ জন। গোবরডাঙা পুরসভা এলাকায় ২ জন।

রবিবারই হাবড়া ব্লক এলাকার বাসিন্দা সতেরো বছরের এক কিশোরী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। হাবড়া ১ বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘ওই কিশোরী কলকাতার একটি হাসপাতালে গিয়েছিল। তার গল ব্লাডারে স্টোন হয়েছে। রবিবার লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। সে পজ়িটিভ। বাড়ি থেকে হাসপাতালে যাওয়ার আগে উপসর্গ ছিল না।’’ হাবড়া ১ ব্লক এলাকায় ৪টি স্কুলে ১০০ জন পরিযায়ী শ্রমিক নিভৃতবাসে রয়েছেন। হাবড়া শহরের বাসিন্দা এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনিও কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। হাবড়া পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক মানস দাস বলেন, ‘‘ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলার রিপোর্ট শনিবার রাতে জানা গিয়েছে। তিনি পজ়িটিভ।’’ গোবরডাঙা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে দুই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। অন্যজন চিকিৎসাধীন। গোবরডাঙা পুরসভার পুরপ্রশাসক সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘পুরসভা এলাকায় দু’জন পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্র থেকে ফিরে আক্রান্ত হয়েছিলেন।’’

অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে ৭ জনই পরিযায়ী শ্রমিক। ভিন্ রাজ্য থেকে সম্প্রতি তাঁরা ফিরেছিলেন। পুরপ্রশাসক প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে ৭ জন সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। ৩ জন কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুরসভা এলাকায় ১২টি নিভৃতবাসে এখন ৭০ জন পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন।’’

অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের সকলের লালারস পরীক্ষা করা হচ্ছে না। অনেকেই বাড়ি চলে যাচ্ছেন। স্কুল নিভৃতবাসে যাঁরা থাকছেন, তাঁদের থাকা-খাওয়ার পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। আমরা দাবি করেছি, ফিরে আসা সব পরিযায়ী শ্রমিকদের লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে হবে। কারণ উপসর্গ ছাড়াও অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।’’

প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নির্দেশে এখন উপসর্গ ছাড়া লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তবে সকলের নিয়মিত থার্মাল স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা নিয়মিত নিভৃতবাসে থাকা মানুষদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।

হাবড়া, অশোকনগর, গোবরডাঙার বড় অংশের মানুষ এখন মাস্ক ছাড়াই রাস্তায়, বাজার-হাটে বেরোচ্ছেন। শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে যাতায়াত করছেন। মাস্ক বাইকে ঝুলিয়ে বা ঠৌঁটের নীচে নামিয়ে অনেকেই ঘুরছেন। প্রশাসনের কর্তারা অনেকেই মনে করছেন, এখন বাইরে বেরোনো অনেক বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের সতর্ক থাকতেই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement