ঠাকুরনগরে অমিত শাহের সভার জন্য হেলিকপ্টারের মহড়া উড়ান। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
সারাদিন চলল নানা প্রস্তুতি, হেলিকপ্টারের মহড়া। প্রত্যাশার পারদও চড়েছিল মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে। কিন্তু শুক্রবার বেশি রাতে খবর এল, অনিবার্য কারণে বাতিল হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বঙ্গ-সফর। আজ, শনিবার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে সভা করার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। নাগরিকত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে মতুয়া এবং উদ্বাস্তুদের মধ্যে। বিজেপি বলছে, নাগরিকত্ব মিলবে। মতুয়া ও উদ্বাস্তু মানুষের প্রশ্ন, কবে?
বিজেপির একাংশ মনে করেছিলেন শনিবারের সভায় নাগরিকত্ব বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু সেই আশায় জল ঢালল হঠাৎ আসা খবর। মতুয়া ও উদ্বাস্তু মানুষের আশা ছিল, নাগরিকত্ব নিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সভা থেকেও সেই বার্তা দেবেন তিনি। আশা-ভঙ্গ হয়েছে তাঁদেরও। রাতের খবর, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা ঠিক করতে বৈঠকে বসেছেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের কর্তারা।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেব রাতে জানান, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আজ সভাস্থলে কোনও অনুষ্ঠানই করা হবে না। বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী অনুষ্ঠানসূচি ঠিক করা হবে। নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপি আশ্বস্ত করলেও সন্দেহ ঘোচেনি মতুয়াদের। কারণ, এর আগে রাজ্য সফরে এসে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে শাহ যা বলেছিলেন, তা থেকেই স্পষ্ট, খুব বড় কোনও পরিবর্তন না হলে এখনই নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার সম্ভাবনা খুবই কম। এই ধোঁয়াশার মধ্যে শাহের সফর নিয়ে সরগরম ছিল ঠাকুরবাড়ি। নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপির দাবিকে ভাঁওতা বলে কটাক্ষ করে শাহের সফরের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল তৃণমূলও।
এক বছরেরও বেশি আগে নাগরিকত্ব আইন তৈরি হয়। তবে আইন তৈরি হওয়ার পরও এতদিন তা কার্যকর না হওয়াতে মতুয়াদের বড় অংশের মানুষ হতাশ এবং তাঁরা বিভ্রান্ত। এমনকি, বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরও নাগরিক আইন কার্যকর করতে দেরি হওয়াতে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। টানাপড়েন পেরিয়ে শনিবার ঠাকুরবাড়িতে আসার কথা ছিল স্বারষ্ট্রমন্ত্রীর। শুক্রবার থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে মতুয়া ভক্তরা ঠাকুরবাড়িতে আসতে শুরু করেছিলেন। তাঁদের অনেকেই রাত বেশি রাত পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিলের খবর পৌঁছয়নি। দুপুরে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা কয়েকজন মতুয়া ভক্ত বললেন, ‘‘আমাদের জীবনে একটাই চাওয়া, তা হল, নাগরিকত্ব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সে বিষয়ে কী আশ্বাস দেন তা শুনতেই এসেছি।’’ শান্তনু বলেছিলেন, ‘‘আমরা খুশি যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে আসছেন।’’ অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের মহা সঙ্ঘাধিপতি তথা শান্তনুর দাদা সুব্রত ঠাকুরের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই সেই ব্যক্তি যিনি আইন কার্যকর করা নিয়ে স্পষ্ট করে আমাদের জানাতে পারবেন। আমরা আশাবাদী।’’ কিন্তু তখন তাঁদের জানা ছিল না, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিলের খবর তাঁদের কাছে আসবে। শুক্রবার সকালে সভাস্থলের মাঠে হেলিকপ্টারের ট্রায়াল রান হয়েছিল। এলাকায় বিজেপি ও অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে তোরণ, পতাকা, কাটআউট লাগানো হয়েছিল। তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শান্তনু, বড়মা বীণাপানি ঠাকুরের ছবি দেওয়া রয়েছে। অমিতের সভার প্রস্তুতি দেখতে এ দিন দুপুরে ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়। ছিলেন বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো। মতুয়াদের পাশে পেতে পিছিয়ে নেই তৃণমূলও। ঠাকুরনগর এবং সংলগ্ন এলাকায় মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া পোস্টার মারা হয়েছিল। তাতে লেখা, ‘মতুয়ার সাথে দিদি’। পোস্টারের উল্লেখ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের জন্য কী কী করেছেন। যদিও তৃণমূলের জেলা কো অর্ডিনেটর গোপাল শেঠ বলেছেন, ‘‘পোস্টার মেরেছেন মতুয়ারা। এর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই।’’
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁ প্রাক্তন তৃণমূল সাংস দ মমতা ঠাকুর এ দিন বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব আইনে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা বলা নেই। সেখানে নাগরিকত্ব নিতে হলে আবেদন করতে হবে। এই আইন আমরা মানি না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করুন আমরা সকলেই নাগরিক।’’
তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে ও ভাঁওতা দিতে আসছেন।’’