গোসাবায় দুর্গাদোয়ানি নদী থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করছেন বিডিও (গোসাবা) সৌরভ মিত্র। নিজস্ব চিত্র।
ইয়াস-বিধ্বস্ত সুন্দরবনে ত্রাণ দিতে আসছে বহু সংস্থা। আর ত্রাণের সঙ্গে সুন্দরবনে ঢুকছে প্লাস্টিক। গত কয়েকদিনে প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ, বোতল, জলের পাউচে ভরে গিয়েছে এলাকা। ফলে দূষণ বাড়ছে সুন্দরবনে। পাশপাশি বাদাবনের বাস্তুতন্ত্রে এই জমে থাকা প্লাস্টিক মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, ঝড়ের দু’দিন পর থেকেই ত্রাণ নিয়ে এলাকায় আসতে শুরু করেছে অনেক সংস্থা। এখনও প্রতিদিন অন্তত ৫টি করে দল ত্রাণ নিয়ে ঢুকছে। এক একটি দল ৪০০-৫০০ পরিবারের হাতে প্যাকেটবন্দি খাবার তুলে দিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের প্যাকেটেই খাবার দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ শুধু এই এলাকাতেই সপ্তাহে অন্তত ১৪ হাজার প্লাস্টিক জমছে। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে দুই জেলার উপকূল এলাকায় কী পরিমাণে প্লাস্টিক জমছে।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, “ ত্রাণের নামে প্রচুর প্লাস্টিক সুন্দরবনে ঢুকে পড়ছে। সেগুলি মিশছে নদীর জলে। জোয়ার ভাঁটার ফলে আরও বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন জলজ প্রাণীদের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই ভূমিক্ষয় বাড়ছে। যারা ত্রাণ দিতে আসছেন, তাঁদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।” পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটা একটা বড় সমস্যা। অতীতে দেখা গিয়েছে জলের সঙ্গে এই প্লাস্টিক প্যাকেট হরিণ, শুশুক, কুমিরের পেটে চলে গিয়েছে। গলায় প্লাস্টিক আটকে হরিণের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। সুতরাং মানুষের উপকার করতে গিয়ে অনেকেই সুন্দরবনের বিপদ ডেকে আনছেন।”
গোসাবার রাঙাবেলিয়া খেয়াঘাটে পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের জলের পাউচ। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা
প্রশাসন অবশ্য নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে চট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে অনেক জায়গাতেই। প্রশাসনের তরফে পড়ে থাকা প্লাস্টিক সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোথাও কোথাও। কোথাও আবার প্রশাসনের দেওয়া জলের প্লাস্টিক পাউচ জমে থাকার অভিযোগও উঠছে।
গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, “যারা ত্রাণ দিতে আসছেন, তাঁদের বারবার প্লাস্টিক সম্পর্কে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই শুনছেন না। ইতিমধ্যেই আমরা দ্বীপাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পড়ে থাকা প্লাস্টিক সংগ্রহের কাজ শুরু করেছি। এই কাজে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ব্যবহার করা হচ্ছে।” হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “আমরা এ বিষয়ে নানা ভাবে প্রচার চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্লাস্টিক প্যাকেট, জলের বোতল সংগ্রহ করে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের অফিসাররা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। এলাকা পরিদর্শন করছেন।”
এ ব্যাপারে কী ভাবছে ত্রাণ দিতে আসা সংগঠনগুলি? সম্প্রতি হিঙ্গলগঞ্জে ত্রাণ দিতে আসা একটি সংগঠনের সদস্য সমীরকুমার মান্না বলেন, “প্লাস্টিক দূষণের বিষয়টা আমরাও বুঝতে পারছি। কিন্তু পরিবেশবান্ধব ব্যাগ সহজে পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও দাম বেশি। ফলের ত্রাণের টাকার অনেকটা ব্যাগের পিছনেই চলে যাবে। তবে পরবর্তীকালে ত্রাণ নিয়ে এলে কাপড়ের ব্যাগই ব্যবহার করব বলে ভেবেছি।”