School Student working

‘পাশ করে কী করব, সেই তো শ্রমিকের কাজেই যেতে হত’

কিছুদিন আগে সরকারি স্কুলগুলিতে পরীক্ষা শেষে হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, পড়ুয়ারা সকলে ট্যাবের টাকা পেলেও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেয়নি অনেকেই।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:১২
Share:

শ্রমিকের কাজ করছে স্কুল পড়ুয়া। — ফাইল চিত্র।

রাজ্য সরকার উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়াদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য করোনার সময়ে থেকে ট্যাব কেনার জন্য টাকা দিয়ে আসছে। যা পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ট্যাব নিলেও অনেকে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় বসেনি বলে জানা যাচ্ছে।

Advertisement

কিছুদিন আগে সরকারি স্কুলগুলিতে পরীক্ষা শেষে হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, পড়ুয়ারা সকলে ট্যাবের টাকা পেলেও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেয়নি অনেকেই। এর মধ্যে বেশিরভাগ ছাত্র ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজে চলে গিয়েছে বলে জানতে পেরেছেন শিক্ষকেরা। মেয়েদের অনেকের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এরা আর স্কুলে ফিরবে না বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকেরা।

এই অবস্থা সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জের একাধিক স্কুলের।

Advertisement

স্কুল সূত্রের খবর, ট্যাবের টাকা পেতে পড়ুয়াদের উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এ বছর মোটামুটি সব স্কুলেই টেস্ট শুরু হয়েছে ১৬ নভেম্বর নাগাদ। শেষ হয়েছে ২৬ নভেম্বর। এ দিকে, পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢুকেছে ১৪ নভেম্বর নাগাদ। ফলে টেস্ট না দিলেও ট্যাবের টাকা পেতে সমস্যা হয়নি তাদের।

সন্দেশখালি থানার কেনারাম হাইস্কুলের ৮০ জন পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট দেয়নি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমেন রায় বলেন, ‘‘এতজন ছাত্র ট্যাবের টাকা পেয়েও পরীক্ষা না দিয়ে শ্রমিকের কাজে চলে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।’’ হাসনাবাদ ব্লকের চকপাটলি হাইস্কুল সূত্রে খবর, টেস্ট দেওয়ার কথা ছিল ১৪৯ জনের। এর মধ্যে ৩৬ জন পরীক্ষা দেয়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয়কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘যারা পরীক্ষা দিল না, তারা স্কুলেও আসত না। এই ছাত্রদের বেশিরভাগই এলাকায় নেই। ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজে চলে গিয়েছে। মেয়েদের অনেকের বিয়ে হয়ে গিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’’ হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের গোবিন্দকাটি শিক্ষা নিকেতনে ৩২ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দেয়নি। প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘আসলে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে খুব জোর ২৪০ টাকা খরচ হয় কলা বিভাগে। ফলে দরিদ্র পরিবারের অনেক পড়ুয়া শ্রমিকের কাজে যাবে বলে স্থির করে নিলেও ট্যাবের টাকা পাওয়ার জন্য তারা দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে যায়।’’ প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘‘এদের ফের স্কুলে ফেরানো কঠিন। ছাত্রীদের যারা টেস্ট দিল না, তারা প্রায় সকলেই বিয়ে করে নিয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকেই ট্যাবের টাকা পেয়েছে।’’ সন্দেশখালি থানার দাউদপুর এইচএল শিক্ষানিকেতনের ৩৭ জন পড়ুয়া টেস্ট দেয়নি। প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘সবাই ট্যাবের টাকা পেয়েছে। অথচ, অনেকে পরীক্ষা দিল না। যারা পরীক্ষা দেয়নি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, এদের অনেকে কাজে চলে গিয়েছে।’’ হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি মঠবাড়ি ডিএন হাইস্কুলের ৪২ জন পড়ুয়া পরীক্ষা দেয়নি। প্রধান শিক্ষক পলাশ বর্মণ বলেন, ‘‘অনেক গরিব ছাত্র বাধ্য হয়ে শ্রমিকের কাজে ঢুকে যায়। ছাত্রীদের বিয়ে হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মা মেয়েকে একা না রেখে শ্রমিকের কাজে ভিন্‌ রাজ্যে সঙ্গে নিয়ে যান। ফলে ওই মেয়েরা স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।’’

দুলদুলি মঠবাড়ি ডিএন হাইস্কুলের এক ছাত্র তামিলনাড়ুতে শ্রমিকের কাজে যোগ দিয়েছে। পরীক্ষা দেয়নি সে। ফোনে সে বলে, ‘‘সরকার ট্যাবের টাকা দিচ্ছে। ওই টাকা পেতে ২৪০ টাকা খরচ করে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম। পরীক্ষা পাশ করেই বা কী করব? সেই তো শ্রমিকের কাজেই যেতে হত!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement