অশোকনগরে বৃদ্ধ দম্পতি খুনে দুষ্কৃতীরা অধরাই

রবিরার রাতে হাট ন’পাড়া এলাকার বাসিন্দা, বৃদ্ধ মদনমোহন নন্দী ও তাঁর স্ত্রী অর্চনা বাড়িতেই খুন হন। সেই সময়ে বাড়িতে তাঁরা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। পরে তাঁদের ছেলে এসে বাবা-মা’র রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

অশোকনগর শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:০৬
Share:

সোমবার পর্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছিল রাস্তার আলো। মঙ্গলবার সারানো হল আলো। নিজস্ব চিত্র

কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় দিন। কিন্তু অশোকনগরের বৃদ্ধ দম্পতি খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। খুনের কারণ নিয়েও পুলিশের ধন্দ কাটেনি। যে সব বৃদ্ধবৃদ্ধা এ শহরে একা থাকেন, ঘটনার পর থেকে তাঁরাও নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। পুলিশের সক্রিয়তা এবং নজরদারি আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তাঁরা।

Advertisement

বারাসত জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অপরাধীদের খুঁজে বের করতে সব রকম চেষ্টা শুরু হয়েছে। শীঘ্রই তারা ধরা পড়বে।’’ কলকাতা এবং কিছু জেলা শহরে একাকী বৃদ্ধদের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু বারাসত জেলা পুলিশে এখনও তেমন কোনও ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ওই পুলিশকর্তা জানান, কোনও প্রকল্প না থাকলেও যে সব প্রবীণ মানু, একা থাকেন, তাঁদের বাড়িতে বিশেষ নজর রাখা হয়।

রবিরার রাতে হাট ন’পাড়া এলাকার বাসিন্দা, বৃদ্ধ মদনমোহন নন্দী ও তাঁর স্ত্রী অর্চনা বাড়িতেই খুন হন। সেই সময়ে বাড়িতে তাঁরা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। পরে তাঁদের ছেলে এসে বাবা-মা’র রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। বাড়িটি নির্জন এলাকায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল, ওই বাড়ির সামনের রাস্তাটিতে বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছিল। তারা মদ-জুয়ার আসর বসাত। তরুণী-যুবতীরা রাতে রাস্তায় একা বেরোতে ভয় পেতেন। মদনবাবু বা তাঁর স্ত্রী অনেক সময়ে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন। সেই আক্রোশে দুষ্কৃতীরা খুন করেছে কিনা, এ প্রশ্নও উঠেছে এলাকায়।

Advertisement

তবে এই খুনের ঘটনার পরে ওই এলাকায় পুলিশের নজরদারি বেড়েছে। বহিরাগতদের গ্রামে আনাগোনা কমেছে। মদ-জুয়া খেলতে দু’দিন গ্রামে কেউ আসছে না। মহিলারা কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন। গ্রামবাসীর দাবি, বছরভর পুলিশের এমন নজরদারি রাখতে হবে। তা হলে তাঁরা নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।

কিন্তু এ শহরে যে সব বৃদ্ধবৃদ্ধা একা থাকেন, তাঁরা আতঙ্কে ভুগছেন। অনেকেরই ছেলেমেয়ে কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। বছর পঁয়ষট্টির সুজিতকুমার সেন অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। তাঁর বাড়ি অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি জানান, কোনও অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে দেরি করে। পুলিশকে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তবে, নিরাপত্তা নিয়ে শুধু পুলিশের উপর ভরসা করতে তিনি রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি পুলিশকেও নজরদারি বাড়াতে হবে।’’

অশোকনগরের তবলা মহল এলাকার বাসিন্দা, ৭৮ বছরের নারায়ণ ঘোষ সেলাইয়ের কাজ করেন। প্রয়োজনে তাঁকে বাড়ির বাইরে যেতে হয়। ওই বৃদ্ধ বলেন, ‘‘হাট নপাড়ায় বৃদ্ধ দম্পতিকে খুনের কথা শুনেছি। ওই এলাকার মানুষের উচিত ছিল অনেক আগেই মদ্যপ ও জুয়ারিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। তবে আমাদের এলাকায় তেমন কিছু দেখলে অবশ্যই প্রতিবাদ করব। পুলিশকেও আরও সক্রিয় হতে হবে।’’ একই দাবি মানিকতলা এলাকার বৃদ্ধা ছবিরানি সিকদারেরও। তিনি বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে থাকেন। ছবিরানির কথায়, ‘‘চারিদিকে বিভিন্ন ঘটনায় ভয়ে ভয়ে থাকি। পুলিশকে আরও নজরদারি এবং টহলদারি বাড়াতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement