বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর।
বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার চাঁদপাড়া স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে পরিকাঠামোর নানা সমস্যা আছে। দিন কয়েক আগে বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার দু’জনেই দাবি করেন, রেল দফতর থেকে তাঁদের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, চাঁদাপাড়া স্টেশনে শীঘ্রই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। কিন্তু এ কাজের কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে বিধায়ক ও সাংসদের মধ্যে।
দিন কয়েক আগে বিধায়ক স্বপন মজুমদার ফেসবুকে একটি পোস্টে জানান, দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, চাঁদপাড়া স্টেশনে যাত্রী-ছাউনি নতুন করা হোক, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে রাস্তা পর্যন্ত ফুট ওভারব্রিজ তৈরি হোক। স্বপনের দাবি, তিনি রেলকে চিঠি দেন। ব্যক্তিগত ভাবে দিল্লিতে গিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন। এরপরে তাঁর বক্তব্য, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, চাঁদপাড়া স্টেশনে শেডের কাজটি হয়ে গিয়েছে। ফুট ওভারব্রিজের কাজটিও করা হবে বলে রেল দফতর থেকে আশ্বস্ত করেছে।’
বিধায়কের ফেসবুক পোস্টের পরে দেখা যায়, শান্তনু ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বনগাঁ পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর দেবদাস মণ্ডল এবং গাইঘাটার বিজেপি নেতা চন্দ্রকান্ত দাস পাল্টা ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, ‘‘ধন্যবাদ মাননীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে। চাঁদপাড়া স্টেশনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য রেলমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্যোগী হওয়ার জন্য। রেল দফতর থেকে অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করার লিখিত আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু হওয়ার পথে।’’
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কিছুদিন ধরেই সাংসদের সঙ্গে বিধায়কের দূরত্ব বেড়েছে। দু’জনকে এক সঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতেও অনেক দিন দেখা যায়নি। দিন কয়েক আগে বনগাঁ শহরে বাটারমোড়ে বিজেপির পক্ষ থেকে পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শান্তনু ঠাকুর, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর এবং বনগাঁ পুরসভায় বিজেপির একমাত্র কাউন্সিলর দেবদাস মণ্ডল। অথচ ওই সভায় সভায় দেখা যায়নি বিজেপির বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া এবং বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদারকে। দেখা যায়নি বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক সভাপতি রামপদ দাসকেও।
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে বনগাঁয় দুই বিধায়ক ও জেলা সভাপতিকেই এক সঙ্গে বেশিরভাগ কর্মসূচি পালন করতে দেখা গিয়েছি। সেখানে শান্তনু, দেবদাস, সুব্রতকে কার্যত দেখা যায়নি।
চাঁদপাড়া স্টেশনের কাজ শুরু হতে চলা নিয়ে স্বপন বলেন, ‘‘রেলের কাছে আমিই প্রথম আবেদন করেছিলাম। তবে আমি করি বা অন্য কেউ করুক, কাজটা হচ্ছে— এটাই বড় কথা। আমি আমার মতো আবেদন করেছিলাম। সাংসদ তাঁর মতো করেছিলেন। বিজেপি উন্নয়নের পক্ষে।’’ তিনি জানান, ছাত্রী-ছাউনি, শৌচালয়, ঘড়ি ও রাস্তার কাজ হতে চলেছে। ফুট ওভারব্রিজের কাজটি এখনই হচ্ছে না।
এ বিষয়ে শান্তনুর বক্তব্য, ‘‘কেবল চাঁদপাড়া স্টেশন নিয়েই নয়, বনগাঁ-বাগদা রেলপথ, স্বরূপনগর- মছলন্দপুর রেলপথ, ঠাকুরনগর স্টেশনে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম তৈরি, বিভূতিভূষণ হল্ট স্টেশনের সমস্যা-সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে রেলমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কাজগুলি করার আবেদন করেছিলাম।’’
তিনি জানান, বুধবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের ডিআরএমের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। শান্তনুর কথায়, ‘‘চাঁদপাড়া স্টেশনের উন্নয়ন নিয়ে কে আগে আবেদন করেছিলেন, তা নিয়ে বিতর্কে ঢুকতে চাই না।’’
এই ঘটনা নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘বনগাঁয় বিজেপি গোষ্ঠীকোন্দলে জর্জরিত। দলের মধ্যে কেউ কাউকে মানে না। কোনও উন্নয়ন ওরা এখনও পর্যন্ত করেনি।’’