প্রতীকী ছবি।
পুরো টাকা যে খরচ করা যায়নি, তা মানছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনও। বিশেষ করে জেলা পরিষদে অর্ধেক টাকাই এথনও অব্যবহৃত। তবে প্রশাসনের দাবি, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি বেশিরভাগ টাকাই খরচ করেছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচের ক্ষেত্রে রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৩১০টি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৭৫.৭৫ শতাংশ টাকার কাজ হয়ে গিয়েছে। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতিতে ৫৭.৫৭ শতাংশ টাকার কাজ হয়েছে। জেলা পরিষদে কাজ হয়েছে প্রায় ৫১.৩৪ শতাংশ টাকার।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামিমা শেখ বলেন, ‘‘পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় আমরা ইতিমধ্যে অনেক কাজ করে ফেলেছি। অনেক কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা সমস্ত কাজ শেষ করতে পারব।’’
প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাসন্তী ব্লক, পোলেরহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েত টাকা খরচে তুলনায় পিছিয়ে। বাসন্তী ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল এর অন্যতম কারণ। বিশেষ করে, বিভিন্ন পঞ্চায়েতে কী ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে, তা নিয়ে শাসকদলের নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে দলের একাংশের মত। বিধায়ক শ্যামল মণ্ডলকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতে আবার শাসকদলের সঙ্গে স্থানীয় জমি কমিটির ঝামেলা রয়েছে। জমি কমিটির বাধায় প্রধান, উপপ্রধান-সহ পঞ্চায়েত কর্মীরা ঠিক মতো পঞ্চায়েত দফতরে যেতে পারেন না বলে অভিযোগ। তার জেরে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন এলাকায় টাকা খরচের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে, তেমনই পঞ্চায়েত এলাকায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট নির্মাণের ক্ষেত্রে জমিজট, ইমারতি দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের মত।
পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাকিমুল ইসলাম বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে আমাদের পঞ্চায়েত দফতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নানা ভাবে বাধা সৃষ্টি করা হয়। তারপরেও আমরা পঞ্চায়েত এলাকায় বিভিন্ন রাস্তাঘাট, নিকাশি-নালা-সহ বিভিন্ন কাজ করেছি। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ টাকার কাজ হয়েছে। বেশ কিছু কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই বাকি টাকার কাজ শেষ হবে।”
জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসানের দাবি, ‘‘ওরা মিথ্যা অভিযোগ করছে। ওরা যাতে চুরি করতে না পারে, সে জন্য আমরা সব রকম ভাবে সচেষ্ট। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচের ক্ষেত্রে বেশ কিছু কাজের টেন্ডার হয়েছে। ওরা সেই টেন্ডার বাতিল করতে ঠিকাদারকে হুমকি দিচ্ছে। ওদের নিজেদের লোক যাতে কাজ পায়, সে জন্য ওরা এ সব করছে। এখন টাকা খরচ করতে না পেরে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’ ভাঙড় ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শাহজাহান মোল্লা বলেন, “পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় আমাদের অধিকাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। বাকি টাকার কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।” প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ৭০ শতাংশ টাকা সরাসরি বিভিন্ন পঞ্চায়েতে চলে যায়।
১৫ শতাংশ টাকা পঞ্চায়েত সমিতি পায়। বাকি ১৫ শতাংশ টাকা পায় জেলা পরিষদ। এই টাকা সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। ৫০ শতাংশ টায়েড ফান্ড (শর্তযুক্ত) ও ৫০ শতাংশ আনটায়েড ফান্ড (শর্তবিহীন)। টায়েড ফান্ডের টাকায় মূলত পানীয় জল ও কঠিন-তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজ করা যায়। আনটায়েড ফান্ডে রাস্তাঘাট, নির্মাণ, জল নিকাশি ব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়। এ ছাড়াও, ভাল কাজের নিরিখেও পঞ্চায়েত টাকা পায়। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচের বিষয়টি নজর রাখছি। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেছি। তার জেরে টাকা খরচের ক্ষেত্রে আমাদের জেলা খুবই ভাল কাজ করেছে। সামান্য যেটুকু কাজ বাকি, তা-ও যাতে দ্রুত শেষ করা যায়, সে জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে।”