ঘরছাড়া: ক্যানিং পূর্বের মঠেরদিঘি এলাকায় ভাঙা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বধূ। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ১২ বিঘা ভেড়িতে বাগদা, গলদা চিংড়ির চাষ করেছিলেন ক্যানিং পূর্ব বিধানসভার দক্ষিণ মৌখালির বাসিন্দা মইদুল মোল্লা। বুধবারের ঘূর্ণিঝড়ে ভেড়ির সমস্ত মাছ ভেসে গিয়েছে। এখন কী ভাবে ঋণ শোধ করবেন, ভেবে রাতের ঘুম গিয়েছে মইদুলের। ‘‘ইয়াস আমাকে পথে বসিয়েছে,’’ বলছেন মইদুল।
শুধু মইদুল নন, ওই গ্রামের নিখিল পুরকাইত এবং জেলার অনেক মৎস্যজীবীর অবস্থা একই রকম। নিখিল জানান, মহাজনের থেকে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ধার করে ১৭ বিঘা ভেড়িতে তিনি বাগদা, গলদা-সহ বিভিন্ন মাছের চাষ করেছিলেন। দুর্যোগে ভেসে গিয়েছে সব মাছ।
শুধু ক্যনিং পূর্ব বিধানসভা এলাকায় ১,৬৯২ জন মৎস্যজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। কারও নৌকা ভেঙে গিয়েছে। কারও মাছ ধরার জাল ছিঁড়ে গিয়েছে। শুধু মৎস্যজীবীরাই নন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক ও পানচাষিরা। নোনা জলে ভেসে গিয়েছে তাঁদের খেত আর পানের বরোজ, বলছে কৃষি দফতর।
জেলা কৃষি দফতরের কর্তাদের দাবি, ধানচাষে ক্ষতি কিছুটা হলেও কম হয়েছে। কারণ, সতর্কতা জারির পরেই বোরো ধান মাঠ থেকে তুলে নিয়েছিলেন চাষিরা।
তবে, বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে পানচাষের। নোনাজল চাষের জমিতে ঢুকে পড়ায় আগামী কয়েক বছর সেখানে চাষ হবে না বলে আশঙ্কা চাষিদের। অতিমারির কারণে বিকল্প আয়ের সুযোগও এখন কম। তাই কার্যত মাথায় হাত তাঁদের।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত জেলায় দেড় লক্ষ বাড়ি ভাঙার খবর পাওয়া গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষির সংখ্যা কমবেশি ৫০ হাজার। ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে মূলত পাট, তিল, মুগ এবং গ্রীষ্মকালীন আনাজ। ৫০ হাজার মুরগি এবং কম বেশি ৩০০ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। ১৪ হাজার হেক্টর পুকুর, ফিশারি ও জলাশয়ের মাছ নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৯০ হাজার মৎস্যজীবী। প্রায় ২০০ নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, জমি থেকে দ্রুত পাম্প করে নোনাজল বার করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জমির মাটি ও জল পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। দফতরের তরফে নোনা জমিতে চাষের উপযোগী স্বর্ণ, গোসাবা ৫, সিআর-সহ বিভিন্ন ধরনের ধানের বীজ দেওয়া হচ্ছে চাষিদের।
উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা বলছেন, নোনাজল দ্রুত বার করা গেলে গ্রীষ্মকালীন আনাজ, পটল, ঝিঙে, কুমড়ো, বেগুন ও লঙ্কা-সহ অন্য আনাজের কিছুটা রক্ষা করা সম্ভব।
বাসন্তীর ভরতগড় গ্রামের বাসিন্দা সালাউদ্দিন মোল্লা জানান, তিনি পাঁচ বিঘা জমি লিজে নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। সব ধান ঘরে তুলতে পারেননি। অর্ধেক মাঠেই নষ্ট হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যা পরিস্থিতি, তাতে লিজ-এর টাকা কী ভাবে শোধ দেব, বুঝতে পারছি না।’’
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নামখানা ব্লকে ২০, কাকদ্বীপে ৬, সাগরে ১৫, পাথরপ্রতিমায় ৩২, গোসাবায় ২২, কুলতলিতে ৯ এবং মথুরাপুর ২ ব্লকে ৩৯ জায়গায় নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আগামী কটালের আগে সমস্ত নদী-বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছি। জমা জল পাম্প করে বার করার চেষ্টাও হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও তৈরি করা যায়নি। বহু এলাকা এখনও জলমগ্ন। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান তার জন্য সবকিছু খতিয়ে
দেখা হচ্ছে।’’