Drug Smuggling

মাছ, আনাজের গাড়িতে  লুকিয়ে আসছে মাদক

বনগাঁ মহকুমার সীমান্ত এলাকা দিয়ে গাঁজা পাচার নতুন ঘটনা নয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, বাইরে থেকে গাঁজা এনে সীমান্তে জড়ো করা হয়।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:০৭
Share:

নেশা: বনগাঁয় উদ্ধার হওয়া গাঁজা। ফাইল চিত্র

মাস কয়েক আগের ঘটনা। গাঁজা পাচার হচ্ছে খবর পেয়ে বনগাঁ থানার পুলিশ একটি গাড়িকে ধাওয়া করে। পুলিশ দেখে গাড়ি রেখে চালক পালিয়ে যায়। গাড়ির ডালা খুলে তল্লাশি চালিয়ে দেখা যায়, ফাঁকা মাছের পেটি এবং মুরগির ট্রে ছাড়া আর কিছু নেই। এক প্রকার হাল ছেড়ে দেন পুলিশকর্মীরা। পরে ডালা থেকে পেটি ও ট্রে নামানোর পরে দেখা যায়, অ্যালুমিনিয়ামের পাটাতন চকচক করছে। সন্দেহ হওয়ায় পাটাতনটি খুলতেই দেখা যায়, নীচে বাক্সের মধ্যে সারিসারি গাঁজার প্যাকেট সাজানো। পুলিশ ওই গাড়ি থেকে ২১০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছিল।

Advertisement

বনগাঁ মহকুমার সীমান্ত এলাকা দিয়ে গাঁজা পাচার নতুন ঘটনা নয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, বাইরে থেকে গাঁজা এনে সীমান্তে জড়ো করা হয়। সুযোগ বুঝে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ওপারে। সীমান্তের বাড়ি, কৃষিখেত গাঁজা পাচারে ব্যবহার করার উদাহরণ অতীতে পাওয়া গিয়েছে।

মাঝে মধ্যেই অভিনব কায়দায় গাঁজা পাচারের ঘটনা সামনে আসে। মাছ, আনাজের গাড়িতে লুকিয়ে আনা হয় মাদক। কিছুদিন আগে গোপালনগর থানার পুলিশ আন্তর্জাতিক গাঁজা পাচার চক্রের হদিস পায়। ৩ জন আন্তর্জাতিক গাঁজা পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১৯৩ কেজি গাঁজা আটক করা হয়েছিল। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছিল, তারা ওড়িশা থেকে গাঁজা আনছিল। বনগাঁর ভিড়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে তা বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল।

Advertisement

সাম্প্রতিক সময়ে বনগাঁ ও গোপালনগর থানার সীমানা লাগোয়া মুড়িঘাটা এলাকা থেকে পুলিশ প্রচুর গাঁজা উদ্ধার করেছে।

সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গরু পাচার বন্ধ হওয়ার পরে সীমান্ত দিয়ে গাঁজা ও হেরোইন পাচার বেড়েছে। কারণ, গাড়িতে মাদক পাচার করা অপেক্ষাকৃত সহজ। নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া পুলিশের পক্ষে তা আটক করা সম্ভব হয় না।

পুলিশ ও বিএসএফ নিয়মিত গাঁজা আটক করছে। পাচারকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারপরেও সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক পাচার পুরোপুরি বন্ধ হয়নি বলেই অভিযোগ। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় পাচার কমেছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ।

গাঁজার পাশাপাশি হেরোইনের কারবারও চলছে। কিছুদিন আগে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকার হেরোইন-সহ তিন পাচারকারীকে বনগাঁ শহর থেকে গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতেরা অনেক দিন ধরেই আন্তর্জাতিক হেরোইন পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছিল, উদ্ধার হওয়া হেরোইন মণিপুর থেকে আনা হচ্ছিল। বিভিন্ন হাত ঘুরে তা বনগাঁয় আনা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ শহরের উপর দিয়ে বাংলাদেশে হেরোইন পাচার অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। বাইরে থেকে আসা হেরোইনের বেশিরভাগ বাংলাদেশে চলে যায় চোরাপথে। বাকি অংশ স্থানীয় বাজারে খুচরো বিক্রি হয়। ‘ঠিক লোক’কে চিনে মোবাইলে বরাত দিলে ডেলিভারি দেওয়া হয় হেরোইন। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে যোগসূত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন পড়ে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ কোনও ব্যক্তির। টাকার বিনিয়মে সে কাজ করতে রাজি হয়ে যায় অনেকেই।

বনগাঁর অনেক জায়গায় চলছে মাদকের ‘হোম ডেলিভারি’। পুলিশ এই তথ্য জানে না, এমনটা নয়। অভিযানও চলে। তবু চলে কারবার। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বনগাঁ শহরে জয়পুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় এখন নতুন করে হেরোইনের খুচরো কারবার শুরু হয়েছে। বনগাঁর পুলিশ সুপার জয়িতা বসু বলেন, “মাদক পাচার বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। নিয়মিত নজরদারি চলছে। রাতে নাকা তল্লাশি করা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement